এ বধ্যভূমিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মীর আবদুল কাইয়ুম, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য নাজমুল হক সরকার, সরকারি কর্মকর্তা আবদুল হক সরকার, ব্যবসায়ী আজিজুল হক চৌধুরী, শামসুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সুরেশ পাণ্ডে, বীরেন সরকার, মকবুল হক চৌধুরী, নওরোজ দৌল্লাহ খান, আমিনুল হক, তৈয়ব আলী, আলাউদ্দিন চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহম্মদ মুক্তাসহ মোট ১৭ জনের লাশ পাওয়া যায়।
বধ্যভূমিটি দীর্ঘদিন অযত্নে পড়ে ছিল। ১৯৯৫ সালের ২৫ নভেম্বর শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিফলক বসানো হয়। এর উদ্বোধন করেন শহীদ মীর আবদুল কাইয়ুমের স্ত্রী অধ্যাপক মাসতুরা খানম। সেদিন অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য এখানকার মাটি সংগ্রহ করে নিয়ে যান। এরপর ২০২০ সালে এ বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ‘মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ’ প্রকল্পের এ স্মৃতিসৌধের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। বধ্যভূমির জায়গাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। তবে স্মৃতিসৌধটি এখনো কেউ দেখভাল করেন না।
আজ বুধবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসেও স্মৃতিসৌধের তালা খোলা হয়নি। সকালে জনমানব উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা প্রধান ফটকটি তালাবদ্ধ দেখেন। এ সময় তাঁরা এটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে কে আছেন, তাঁকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। ফোন করা হয় সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকেও। কিন্তু তিনিও কিছু জানাতে পারেননি। পরে কাউন্সিলরের পরামর্শে প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ফেলা হয়। এরপর ভেতরে ঢুকে তাঁরা শ্রদ্ধা জানান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনও এ স্মৃতিসৌধে গিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
জনমানব উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসেও বধ্যভূমির ফটকে তালাবদ্ধ থাকাটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। এ লজ্জা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যাঁরা এটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত দাবি করেন তিনি।
রাজশাহীতে ২৫ নভেম্বর বাবলাবন গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়। সেদিনও তালাবদ্ধ ছিল এ বধ্যভূমির প্রধান ফটক। সেদিন যাঁরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়েছিলেন, তাঁদের সীমানাপ্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকতে হয়েছিল। তাঁরাও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসেও ফটকে তালা থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডির রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহা. নাশির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা শুধু নির্মাণকাজ করেছিলাম। তারপর এটি জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের।’
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, জায়গাটি পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখভাল করে। প্রধান ফটকের চাবি তাঁদের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে এবং ভেতরের স্মৃতিস্তম্ভের চাবি থাকে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে। রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যাপার থাকলে তাঁদের জানিয়ে তাঁরা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান। জাতীয় দিবসের আগের দিনগুলোতে তাঁরা এটি খুলে পরিষ্কার করেন। তিনি আরও বলেন, সব সময় খোলা রাখলে লোকজন এটি নোংরা করে ফেলবে। পবিত্রতা রক্ষার জন্যই তালা দিয়ে রাখা হয়।