চাকরির পরীক্ষা দিতে এসে দুই বাসের প্রতিযোগিতায় প্রাণ গেল যুবকের

0
102

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে রংপুর থেকে ঢাকায় এসেছিলেন মো. মনিরুজ্জামান ওরফে বাবু (৩১)। তবে পরীক্ষা কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছানো হয়নি তাঁর। দুটি বাসের বেপরোয়া ‘প্রতিযোগিতা’র বলি হয়েছেন মোটরসাইকেল আরোহী এই যুবক। শুক্রবার সকালে রাজধানীর কল্যাণপুরে এ ঘটনা ঘটে। এতে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলটির চালকও আহত হন।

অন্যদিকে একই পরীক্ষা দিতে গাজীপুর থেকে ঢাকায় আসেন জাকিয়া খাতুন। স্বামী মতিউর রহমান (৩৫) মোটরসাইকেল চালিয়ে তাঁকে কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় দু’জনই আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান মতিউর।

মিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, কল্যাণপুরের দুর্ঘটনায় দায়ী বৈশাখী পরিবহন ও পরিস্থান পরিবহনের বাস দুটি জব্দ করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই বৈশাখীর চালক তৌহিদুর রহমান তুষারকে আটক করা হলেও অপরটির চালক মোন্নাফ হোসেন পালিয়ে গেছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহতের চাচাতো ভাই এনামুল হক।

এনামুল হক জানান, পরিবারের সঙ্গে রংপুরের গাবতলীর বড়বাড়ি এলাকায় থাকতেন মনিরুজ্জামান। এলজিইডির ওয়ার্ক অ্যাসিসট্যান্ট পদে চাকরির পরীক্ষা দিতে তিনি গতকাল সকাল ৮টার দিকে ঢাকায় আসেন। তিনি গাবতলীতে বাস থেকে নেমে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে সবুজবাগ রওনা হন। পথে কল্যাণপুর ফুটওভারব্রিজ এলাকায় পরিস্থান পরিবহনের বাসটি মোটরসাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এর আগে দুটি বাস বেপরোয়া গতিতে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে আসছিল। এর একপর্যায়ে প্রথমে পরিস্থানের বাসকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় বৈশাখী পরিবহন। তখন বৈশাখীর বাসটি সামনে থাকা মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেলটি বাসের নিচে চলে যায়। কোমরে মারাত্মক আঘাত পান মনিরুজ্জামান। পরে আশেপাশের লোকজন গিয়ে তাঁকেসহ মোটরসাইকেলের চালককে উদ্ধার করে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নিয়ে যায়। সেখানে মনিরুজ্জামানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। চালকের আঘাত গুরুতর নয়। ঘটনাস্থল থেকে এক বাসচালককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা।

স্বজনরা জানান, রংপুরে আরএফএলে চাকরি করতেন মনিরুজ্জামান। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর বাবা রফিকুল ইসলাম ও মা মমতাজ বেগম।

এদিকে যাত্রাবাড়ীর দুর্ঘটনায় নিহত মতিউর রহমান একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মফিজুল আলম বলেন, স্ত্রীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার পথে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফ্লাইওভারের ওপরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। সিএনজি অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান মতিউর। তাঁর স্ত্রীর কোমরে আঘাত লাগে। তখনই তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মারা যান মতিউর।

তাঁর স্ত্রী জাকিয়া হাসপাতালে জানান, শুক্রবার সকাল ১১টায় ডেমরার রফিকুল ইসলাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে তাঁর পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। সেজন্য গাজীপুরের কালীগঞ্জ থেকে স্বামীর সঙ্গে এসেছিলেন। তবে দুর্ঘটনার কারণে আর পরীক্ষা দিতে যাওয়া হয়নি।

পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনায় দায়ী অটোরিকশাটি ফেলে পালিয়ে যান চালক। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। অটোরিকশা ও দুর্ঘটনা কবলিত মোটরসাইকেলটি জব্দ করে থানায় নেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী খাদিজা বেগম জানান, দুর্ঘটনার সময় তিনি অদূরে ছিলেন। অটোরিকশার ধাক্কায় স্বামী–স্ত্রী ছিটকে পড়লে তিনিসহ অন্যরা এগিয়ে যান। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর রামপুরায় বেপরোয়া বাসের চাপায় নিহত হন চীনের নর্থ ইলেকট্রনিক পাওয়ার ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান (২৪)। এরপর জনতার ধাওয়ার মুখে হাতিরঝিল দিয়ে পালানোর সময় মেহেদী হাসান পারভেজ (১৩) নামে এক প্রতিবন্ধী শিশুকেও পিষে ফেলে বাসটি। এ ঘটনায় বাসচালক আরিফ হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.