একটি মিনি ভ্যানে চড়ে স্ত্রী মরিনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন টনি হুইলার। লন্ডন থেকে যাত্রা শুরু করে প্রথমে আফগানিস্তান, এরপর এশিয়ার অন্যান্য দেশ হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে তাঁদের লেগে যায় তিন বছর। সিডনিতে অবস্থানকালে প্রতিবেশীদের অনেকেই এই লম্বা সফরের গল্প শুনতে চাইতেন হুইলার দম্পতির কাছে। তাই খানিকটা যেন সবার কৌতূহল মেটাতেই সেই দীর্ঘ যাত্রার ছোট্ট বর্ণনা দিয়ে মাত্র ৯৪ পৃষ্ঠার একটি গাইড বই লিখে ফেলেন দুজন।
‘অ্যাক্রস এশিয়া অন দ্য চিপ’ শিরোনামের সেই বই দিয়েই ১৯৭৩ সালে যাত্রা শুরু করে লোনলি প্লানেট। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি কপির বেশি ভ্রমণ-সম্পর্কিত গাইড বই প্রকাশ করেছেন তাঁরা। আগামী অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানটির সুবর্ণজয়ন্তী। এ উপলক্ষকে সামনে রেখে প্রায় পুরো পৃথিবী ঘোরা টনি হুইলার নিজের প্রিয় ৫০টি স্থানের একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন।
নানা দেশের বিভিন্ন স্থানকে মোট ১০টি ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করে প্রতিটিতে ৫টি করে স্থানের নাম উল্লেখ করেছেন টনি হুইলার। একেবারে ‘অদ্ভুত গন্তব্য’ থেকে শুরু করে ‘পুরাই চমক’, ‘মহাযাত্রা’, ‘অসাধারণ অভিজ্ঞতা’, ‘যেখানে যাচ্ছি না’, ‘ফিরে ফিরে যাই’, ‘প্রিয় হোটেল’, ‘অসাধারণ অপেরা শোনার স্থান’, ‘বাদ দেওয়া গেল না’ এবং ‘যে স্থানগুলোয় যেতে চাই’—এমন নানান মজার মজার শ্রেণি তৈরি করেছেন হুইলার। শুনতে অবাক লাগলেও ব্রিটিশ-অস্ট্রেলিয়ান এই ভ্রমণপিপাসুর প্রিয় জায়গাগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে। তবে ‘যেখানে যাচ্ছি না’ শ্রেণিতে বাংলাদেশের নাম করেছেন হুইলার।
‘যেখানে যাচ্ছি না’ শ্রেণিতে কলম্বিয়া, পাকিস্তান, ট্রান্সসিলভানিয়ার পরে এবং ইরানের আগে বাংলাদেশের নাম করে টনি হুইলার লিখেছেন, ‘অবিশ্বাস্য জনঘনত্ব, নানান বিপর্যয় এবং বর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের দেশ বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকা আপনাকে পুরোপুরি ক্লান্ত করলেও বোর করবে না। আপনাকে আশপাশে নিয়ে যাওয়ার জন৵ প্রস্তুত বিশ্বের সবচেয়ে বড় রিকশার বহর। একটা রকেট প্যাডল স্টিমারে নদী ভ্রমণ এখনো আমার বাকেট লিস্টে আছে; কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমার সর্বসাম্প্রতিক বাংলাদেশ ভ্রমণে ছিল একটি রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির।’
সিঙ্গাপুর, নেপাল, ভারতের কলকাতা, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক আর অ্যান্টার্কটিকায় বারবার ফিরে যেতে চান এই ভ্রমণপিপাসু। এ ছাড়াও অদ্ভুত জায়গার তালিকায় উল্লেখ করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং, তুর্কমেনিস্তানের আশগাবাত, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, ইউক্রেনের চেরনোবিল এবং ইতালির রাভেন্না। টনি হুইলারকে বিস্মিত করেছে আফগানিস্তান, আফ্রিকার দেশ চাঁদ, ইতালির আওলিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, কঙ্গো এবং কনটিনেন্ট দ্বীপপুঞ্জ অস্ট্রেলিয়া।