লিটনের ঝোড়ো ফিফটির পরও শেষবেলায় আক্ষেপ

0
9
৭৩ রানের ইনিংস খেলেছেন লিটন দাস

ম্যাচ শুরু হতে তখনো আধা ঘণ্টা বাকি। হঠাৎ গ্যালারি থেকে ভেসে এল উচ্ছ্বাস। কারণ কী? টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নিয়েছেন নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। কিন্তু এটা তো সব ম্যাচেই হয়। টস জেতা অধিনায়ক জানান, আগে ব্যাটিং করবেন নাকি ফিল্ডিং।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দর্শকদের এই উচ্ছ্বাসের কারণ আসলে সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচ। পকেটের পয়সা খরচ করে তাঁরা দেখেছেন একপেশে ম্যাচ। দুঃখটা আরও বেড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং খুব একটা দেখতে না পারায়। প্রথম ম্যাচে ১৩.২ ওভার এবং দ্বিতীয় ম্যাচে আরও দুই বল কম খেলেই জিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাচ্ছে মানে তো পুরো ব্যাটিংটাই উপভোগ করা যাবে!

কিন্তু বেরসিক বৃষ্টি একটু অপূর্ণতা রেখেই দিল। সিলেটে আজ দুই দফা বৃষ্টির বাধার পর দর্শকেরা প্রথমে ব্যাট করা বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখতে পেরেছেন ১৮.২ ওভার। ৪ উইকেটে ১৬৪ রান করার পর বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশের ইনিংসটা ওখানেই শেষ ঘোষণা করায় পুরো ২০ ওভার আর ব্যাটিং দেখা হয়নি। খেলাও ওখানেই শেষ। বৃষ্টি আর না থামায় রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ সিরিজ জিতল ২–০ ব্যবধানে।

অবশ্য পুরো ২০ ওভার বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখতে না পারার অতৃপ্তি অনেকটাই পুষিয়ে যাওয়ার কথা ব্যাটসম্যানদের চার–ছক্কা দেখে। বাংলাদেশের ইনিংসে ৮ চারের সঙ্গে ছিল ৭টি ছক্কাও। দর্শকদের পয়সা উসুল করিয়ে দেওয়াটা শুরু অধিনায়ক লিটন দাসের ব্যাটে।

তানজিদ–পারভেজকে বিশ্রাম দেওয়ায় আজ ইনিংস উদ্বোধন করেছেন লিটন দাস ও সাইফ হাসান
তানজিদ–পারভেজকে বিশ্রাম দেওয়ায় আজ ইনিংস উদ্বোধন করেছেন লিটন দাস ও সাইফ হাসান

আগের দুই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলেছিল আগেই। শেষ ম্যাচটা এশিয়া কাপের আগে নিজেদের শেষ ম্যাচ হওয়ায় প্রথম দুই ম্যাচে না খেলাদের পরখ করে নেওয়ার সুযোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। একাদশে ৫ পরিবর্তনের সুবাদে ওপেনিংয়ে সাইফ হাসানের সঙ্গী হন লিটন। তানজিদ হাসান–পারভেজ হোসেন ছিলেন বিশ্রামে।

শুরু থেকেই বিধ্বংসী লিটন ড্যানিয়েল ডোরামের তৃতীয় ওভারেই তিন চার আর ১ ছক্কায় নেন ২২ রান। বাংলাদেশের রান তখন কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩৯। কিন্তু তখনো যে সবার অজানা—ফ্লাডলাইটে বিভ্রাট আর বৃষ্টির বাধায় কিছুক্ষণ পরই মিইয়ে যাবে রোমাঞ্চ!

প্রথম ধাক্কা ৩.৫ ওভার শেষে। হুট করে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটের আলো কমে আসে। তার আগে চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে আউট হয়ে যান সাইফ হাসান। তাঁকে দলে রাখার কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, যেকোনো জায়গায় খেলতে পারেন। প্রথম ম্যাচে চারে নেমে সেই ঝলক কিছুটা দেখিয়েছিলেনও। কিন্তু আজ ওপেনিংয়ে নেমে একবার জীবন পেয়েও ৮ বলে ২ চারে ১২ রানের বেশি করতে পারেননি।

২৪ বলে ফিফটি করেছেন লিটন দাস
২৪ বলে ফিফটি করেছেন লিটন দাস

১১ মিনিট বন্ধ থেকে খেলা আবার শুরু হওয়ার পরও লিটন ছিলেন আগের মতোই। ৩ বল পর শুরু হয় বৃষ্টি, যার দুটিতেই লিটন বাউন্ডারি মারেন। বৃষ্টি–বিরতিটা অবশ্য ফ্লাডলাইট–বিভ্রাটের মতো ক্ষণস্থায়ী হয়নি। ৩৫ মিনিট পর খেলা শুরু হলেও ছন্দটা যেন হারিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের।

তার মধ্যেও ২৭ বলে ফিফটি করে একটি রেকর্ড নিজের নামে করে নিয়েছেন লিটন। ১৩ ফিফটি করা সাকিব আল হাসানকে ছাড়িয়ে টি–টোয়েন্টি সংস্করণে তিনিই এখন বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি হাফ সেঞ্চুরির মালিক।

বৃষ্টিতেই পণ্ড হয়েছে খেলা
বৃষ্টিতেই পণ্ড হয়েছে খেলা

তবে বৃষ্টির পর লিটনের ব্যাটেও ছন্দ ফেরেনি। খেলা বন্ধ হওয়ার আগে করেছিলেন ১৬ বলে ৪২ রান। পরে এসে আরও ৩০ বল খেলে যোগ করেন মাত্র ৩১। কাইল ক্লাইনের করা ১৫তম ওভারে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ৪৬ বলে চার বাউন্ডারি ও ৬ ছক্কায় ৭৩ রান করেন লিটন। ১৪ বল খেলে তাওহিদ হৃদয় ৯ আর শামীম হোসেন ১৯ বলে আউট হন ২১ রান করে।

তবে শেষ দিকে নুরুল হাসান ও জাকের আলী জুটি বেঁধে আবার উচ্ছ্বাস ফেরাতে শুরু করেছিলেন গ্যালারিতে। তাঁদের ২৩ বলের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে ৪২ রান। এরপর তো বৃষ্টির বাধায় বাংলাদেশের ইনিংসটা শেষ হয়ে যায় হুট করেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ১৮.২ ওভারে ১৬৪/৪ (লিটন ৭৩, নুরুল ২২*, শামীম ২১, জাকের ২০*, সাইফ ১২; ক্লাইন ৩/৫৩, প্রিঙ্গল ১/১৮)। ফল: ম্যাচ পরিত্যক্ত। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: লিটন দাস। সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২–০ ব্যবধানে জয়ী। ম্যান অব দ্য সিরিজ: লিটন দাস।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.