লাভের আশায় ব্যক্তি পর্যায়ে বাড়ছে ডলার মজুত

0
133
ডলার

ব্যবসা-বাণিজ্যে ডলার লেনদেন হয় শুধু অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরভিত্তিক। দেশের বাইরে যাওয়ার সময় মানুষ ব্যাংক বা খোলাবাজার থেকে নগদ ডলার কিনে নিয়ে যায়। এর বাইরে সাম্প্রতিক সময়ে একটি শ্রেণি বিনিয়োগের উপাদান হিসেবে বেছে নিচ্ছে ডলারকে। সংকটের কারণে দর বাড়বে– এ আশায় তারা নগদ ডলার কিনে ঘরে রাখছে। এ প্রবণতা বেড়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন গুজবে গত সপ্তাহে খোলাবাজারে প্রতি ডলারে ৭ থেকে ৮ টাকা বেড়ে ১২৭ টাকায় উঠেছিল। অবশ্য গতকাল তা ১২৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যদিও ব্যাংকে ১১৪ টাকা এবং মানিচেঞ্জারগুলোর জন্য নগদ ডলার বিক্রির সর্বোচ্চ দর ১১৭ টাকা ধার্য করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, নগদ ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকের মতো মানিচেঞ্জারগুলোর জন্যও একটি দর ধার্য করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল মানিচেঞ্জারস অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডেকে বলা হয়েছে, ১১৫ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনে সর্বোচ্চ ১১৭ টাকায় বিক্রি করতে হবে। আর ব্যাংকগুলো ১১৩ টাকায় নগদ ডলার কিনে সর্বোচ্চ ১১৪ টাকায় বিক্রি করতে পারে। তবে এ দরে ডলার মিলছে না। বেশির ভাগ ব্যাংকে এখন নগদ ডলার পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। এ ছাড়া বিদেশি বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ হাউসের বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল এক বৈঠকে প্রণোদনাসহ রেমিট্যান্সে ১১৬ টাকার বেশি দর অফার না করার অনুরোধ করেছে।

মানিচেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি একেএম ইসমাইল হক বলেন, সবাই মিলে ডলারের বাজার স্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। তবে চাহিদামতো ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ডলারের দর বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো, এটি এখন শেয়ার ব্যবসার মতো হয়ে গেছে। অনেকেই  মনে করছে, দর বাড়বে। ফলে তারা ডলার কিনে মজুত করছে। এফডিআর বা সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে একটি শ্রেণি এখন ডলার কিনে রাখছে। এ ছাড়া বছরের শেষ সময়ে চিকিৎসা, ভ্রমণসহ বিভিন্ন কারণে দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। সব মিলিয়ে নগদ ডলারের দর  বেড়েছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোমবার তাদের ডেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে। সে অনুযায়ী তারা ব্যবসা করার চেষ্টা করছেন।

গতকাল মানিচেঞ্জার ও খোলাবাজারে সর্বোচ্চ ১২৬ টাকায় ডলার বিক্রি হয়েছে। তারা কিনেছে ১২৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১২৫ টাকা ৪০ পয়সায়। গত বৃহস্পতিবার প্রতি ডলারে ৫ টাকা বেড়ে ১২৭ টাকায় উঠে যায়। এর পর রোববার মানিচেঞ্জারগুলোকে টেলিফোন করে ১১৭ টাকায় ডলার কিনে ১১৮ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করতে বলা হয়।

বিদ্যমান আইনে ব্যবসার উদ্দেশ্যে খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে  রাখা বেআইনি। অবশ্য প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে আসার সময় কিংবা সভা-সেমিনার থেকে ফিরে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার নিজের কাছে রাখতে পারেন। গত বছরের আগস্টে ডলারের দর ১২০ টাকায় ওঠার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক করে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়। সেখানে বলা হয়, নিবাসী বাংলাদেশি ব্যক্তি দেশে ফিরে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার নিজের কাছে বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে রাখতে পারেন। পরবর্তী বিদেশ যাওয়ার সময় তা সঙ্গে নিতে পারেন। কেউ ১০ হাজার ডলারের বেশি আনলে দেশে এক মাসের মধ্যে বিক্রি বাধ্যতামূলক। নির্দেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়।

মানিচেঞ্জার, ব্যাংকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে এমনিতেই এখন ডলারের সংকট রয়েছে। আবার ঘুষ, দুর্নীতি, শুল্ক ফাঁকি ও বেনামি ঋণের কারণে অর্থ পাচার বেড়েছে। এতে করে হুন্ডির চাহিদা বেড়েছে। আবার প্রতি মাসে ডলারের দর বৃদ্ধির কারণে প্রবাসীদের কেউ কেউ অর্থ পাঠাতে দেরি করছেন। রপ্তানিকারকরাও ডলার আনতে দেরি করছেন। বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ব্যাংকগুলোকে প্রণোদনাসহ সর্বোচ্চ ১১৬ টাকায় ডলার কেনার নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেকে ১২৪ টাকা পর্যন্ত দরে কিনছে। ব্যাংকের ডলারের খোলাবাজারে নগদ ডলারের দর বেশি থাকে। একটি শ্রেণি এখন নগদ ডলার কিনে মজুত করছে, যা সাম্প্রতিক দরবৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, অনেকদিন ধরে শেয়ারবাজারের অবস্থা খারাপ যাচ্ছে। সম্প্রতি ব্যাংক আমানতে সুদহার বাড়লেও তা মূল্যস্ফীতির অনেক নিচে। আবার নানা কারণে কিছু ব্যাংকের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কারণে গত অর্থবছর থেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমছে। সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা পাওয়া গেলেও অনেকে তা জানেন না। ফলে একটি শ্রেণি এখন ডলার কেনায় ঝুঁকেছেন।

কয়েকটি মানিচেঞ্জারের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত দরে তারা ডলার কিনতে পারছেন না। ফলে কেউ লোকসানে বিক্রি করবে না। সোমবার ১২৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১২৫ টাকা ৪০ পয়সায় ডলার কিনে বিক্রি করেছেন ১২৬ টাকায়। তারা বলেন, বাজার ঠিক করতে হলে সবার আগে নগদ ডলার মজুত করে  বিনিয়োগের প্রবণতা ঠেকাতে হবে। অনেকেই যে হাজার হাজার ডলার কিনে আলমারি বা লকারে জমা রেখেছে তা বাজারে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শেয়ারবাজার ও বীমা কোম্পানিতে বিনিয়োগে মুনাফা ও আস্থা বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, মূল্যস্ফীতি অনেক বাড়লে তখন একটি শ্রেণি কোথায় বেশি রিটার্ন পাওয়া যাবে, তা নিয়ে ভাবে। অনেকে ডলারে বিনিয়োগ করছেন বলে তারাও শুনেছেন। তবে এটি প্রমাণ করা বা ঠেকানোর দায়িত্ব তাদের নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি দেখতে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.