লাকসামে যত দূর চোখ যায় শুধু লাল শাপলা, দেখতে যাচ্ছেন অনেকে

0
28
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার তারাপুর গ্রামের জলাশয়ে সৌন্দর্য ছড়ানো শাপলা

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার একটি গ্রাম তারাপুর। গ্রামটির ফসলের মাঠে বর্তমানে কোথাও হাঁটুপানি, আবার কোথাও সামান্য পানি। এর মধ্যেই বিস্তীর্ণ মাঠ সেজে রয়েছে লাল শাপলায়। গ্রামটির ফসলের মাঠে যত দূর চোখ যায়, শুধু লাল শাপলার চোখধাঁধানো সৌন্দর্য। স্থানীয় লোকজন বলছেন, আগে এত শাপলা এখানে দেখেননি। এ শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকেই আসছেন।

কুমিল্লা নগর থেকে তারাপুর গ্রামটির দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার। সম্প্রতি এক সকালে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে গ্রামটিতে ঢুকতেই চোখে পড়ল একদল তরুণকে। তাঁরা এসেছেন লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। লাল শাপলায় সেজে থাকা তারাপুরের ফসলের মাঠটিও মহাসড়ক লাগোয়া। ওই তরুণদের বেশির ভাগই পাশের বরুড়া উপজেলার। একটু পরেই চোখে পড়ল আরও বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে। কেউ ছবি তুলছিলেন, কেউ কাদা মাড়িয়ে লাল শাপলা ছিঁড়তে নেমেছিলেন।

ওই তরুণদের একজন বরুড়া উপজেলার ছোট লক্ষ্মীপুর গ্রামের হৃদয় রাজ। তিনি বলেন, ‘আমি একটি ফেসবুক পেজের জন্য ভিডিও করতে এসেছি। সূর্যোদয়ের পর মাঠজুড়ে ফুটে থাকা শাপলার সৌন্দর্য যে কারও নজর কাড়ে।’

তারাপুরের পাশের গাজীপুর গ্রাম থেকে আসা তরুণ শাহরিয়ার রিফাত বলেন, ‘আমি প্রায় দিনই সকালে লাল শাপলা দেখতে এখানে আসি। শাপলা ফুল ভোরবেলা ফোটে, দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাপড়িগুলো বুজে যায়।’

অন্তত ৩০ একর জায়গাজুড়ে এ শাপলা জন্মেছে জানিয়ে তারাপুর গ্রামের বাসিন্দা দুলাল দাস বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই এ গ্রামে থাকি। এ ধানের জমিতে লাল শাপলা দেখিনি। এ বছর বন্যার কারণে জমিতে ফসল নেই। বন্যার পানি কমার কিছুদিন পরই এই লাল শাপলা জন্মেছে। ভোর থেকেই মানুষ এই শাপলা দেখতে আসছেন।’

লাকসামের বিজরা রহমানিয়া চিরসবুজ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, অতীতে এ এলাকায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এভাবে লাল শাপলার হাতছানি দেখা যায়নি। লাল শাপলা গ্রামবাংলার প্রকৃতির এক অনবদ্য সৌন্দর্য। তারাপুর গ্রামের পুরো ফসলের মাঠের চারদিকে ফুটে থাকা এসব শাপলার রং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেন একাকার হয়ে গেছে। তিনি নিজেও ঘুরে দেখে এসেছেন। ভোরবেলায় শাপলা ফুলের পাঁপড়িতে হালকা শিশিরের ছোঁয়া সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসছেন সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, বন্যার কারণে এই লাল শাপলা লাকসামের পাশাপাশি মনোহরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমিতেও জন্মেছে। কিছুদিন পরেই এসব জমিতে বোরো আবাদ হবে। এ শাপলার পাতা, কাণ্ড পচে গেলে মাটিতে জৈব পদার্থ হিসেবে কাজ করবে। মূলত লাল শাপলা প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায়। ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ সেই সৌন্দর্যে মন ভরান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.