ঢাকার ধামরাই উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বড়নালাই গ্রাম থেকে এক তরুণকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ১৭ দিনেও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে তাঁর পরিবারের অভিযোগ। ওই তরুণের নাম রহমত উল্লাহ (২০)। তিনি বড়নালাই গ্রামের মৃত আবদুর রউফের ছেলে।
দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রহমত উল্লাহ সবার ছোট। বড় ভাই সৌদিপ্রবাসী। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মা ও ভাবীর সঙ্গে বাড়িতেই থাকতেন রহমত উল্লাহ। তিন মাস ধরে ইলেকট্রিকের কাজ শিখছিলেন তিনি। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, রহমত উল্লাহকে ২৯ আগস্ট র্যাব পরিচয়ে একটি দল তুলে নিয়ে যায়। এর পর থেকে নিখোঁজ তিনি। এ বিষয়ে কোথাও আইনি সহায়তাও পাচ্ছে না পরিবারটি।
রহমত উল্লাহর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৯ আগস্ট দিবাগত রাত রাত ১২টার দিকে র্যাবের আদলে পোশাক পরা ও সাদা পোশাকে ২৫-৩০ জনের একটি দল ধামরাই উপজেলার বড়নালাই গ্রামের রহমত উল্লাহর বাড়িতে উপস্থিত হন। এ সময় বাড়িতে রহমত উল্লাহ, তাঁর মা মমতাজ বেগম এবং ভাবী সাথী আক্তার ছিলেন। দলের সদস্যরা বাড়ির মূল ফটকে কড়া নাড়লে রহমত উল্লাহ ভয়ে ঘরের সিলিংয়ের ওপর চলে যান। পরে পরিবারের সদস্যরা দরজা ও মূল ফটক খুলে বাইরে বের হলে দলের কয়েকজন সদস্য ঘরে প্রবেশ করের। তাঁদের মধ্যে চারজন সিলিংয়ে উঠতে গেলে রহমত উল্লাহ নিজ থেকেই নিচে নেমে আসেন।
রহমত উল্লাহর ভাবী সাথী আক্তার বলেন, ‘ওর (রহমত উল্লাহর) বড় ভাই বিদেশ থাকেন। তার বিরুদ্ধে মাঠের বিরোধ নিয়ে একটি মামলা রয়েছে। ওই মামলায় বড় ভাইকে না পেয়ে ছোট ভাইকে ধরে নিয়ে যেতে পারে। তাই রহমত ঘরের সিলিংয়ে গিয়ে লুকায়। পরে নেমে এলে কালো পোশাক পরা লোকজন তাকে তুলে নিয়ে যায়। কেন নেওয়া হচ্ছে, জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হচ্ছে বলে জানান। পরে বাইরে র্যাবের একটি গাড়ি ও হাইস গাড়ি দেখতে পাই।’
রহমত উল্লাহর ভগ্নিপতি মশিউর রহমান বলেন, ‘ঘটনার পর ভোরে মানিকগঞ্জ র্যাব ক্যাম্পে গেলে তাঁরা ধামরাই থানায় খোঁজ নিতে বলেন। থানায় পুলিশও কোনো তথ্য দিতে পারেনি। এরপর নবীনগর র্যাব ক্যাম্প ও সাভারের ডিবি কার্যালয়ে খোঁজ নিই। তারাও কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। পর দিন আবার মানিকগঞ্জ র্যাব ক্যাম্পে গেলে তাঁরা ধামরাই থানায় জিডি করার পরামর্শ দেন এবং চার-পাঁচ দিন অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর থানায় জিডি করতে গেলে তাঁরা জিডি না নিয়ে র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। র্যাব কার্যালয়ে গেলে তাঁরা জানান যদি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোনো সংস্থা নিয়ে যেয়ে থাকে তাহলে চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই খোঁজ পেয়ে যাবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো খোঁজ পেলাম না।’
রহমত উল্লার খোঁজ না পেয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে পরিবারটি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কই আছে কেউ কিচ্ছু বলে না। ওর বিরুদ্ধে তো কোনো মামলাও নাই। থানায় জিডিও রাখে নাই। ও যদি বাঁইচা থাকে, তাইলে ওরে জানি পৌঁছাইয়া দেয়। আর যদি মইরা যাইয়া থাকে, তাইলেও ওর লাশটা জানি পৌঁছাইয়া দেয়।’
র্যাব-৪-এর সিপিসি-৩ মানিকগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমরা যাইনি। র্যাব হেড কোয়ার্টার থেকে আসছে হয়তো। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হয়তো কিছু থাকতে পারে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হলেও এত দিন তো হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, ‘র্যাব পরিচয়ে কাউকে তুলে নেওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন এমন কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। নিখোঁজ ওই কিশোরোর পরিবার সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই তাদের আইন অনুসারে সহযোগিতা করা হবে।’