নিহত সুলতানার মামা এবং নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক বলেন, তাঁর ভাগনি বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র্যাবের লোকজন তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। তবে তাঁকে র্যাবের কোন ক্যাম্প নেওয়া হলো, সে ব্যাপারে তাঁরা কিছুই জানতেন না। দুপুর ১২টার পর জানতে পারেন, সুলতানা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে গিয়ে তিনি র্যাবের লোকজন দেখেন। কিন্তু ভাগনি কোনো কথা বলতে পারছিলেন না। কিছুক্ষণ পর তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। যদিও লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে শনিবার দুপুরের পর।
এ বিষয়ে র্যাব-৫-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব বলেন, সুলতানার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার একটি অভিযোগ পায় র্যাব। তাঁর ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ ছিল। ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখে র্যাব অভিযোগের সত্যতা পায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়। কিন্তু আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাঁকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে রাজশাহীতে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজশাহীতে নেওয়ার পর তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হয়। শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তিনি মারা যান। আইনি প্রক্রিয়া শেষে গতকাল দুপুরে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মৌমিতা জলিল বলেন, বুধবার দুপুরে র্যাবের লোকজন অসুস্থ অবস্থায় এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। জরুরি বিভাগে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ওই রোগী হৃদ্রোগে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাজশাহীতে পাঠানো হয়। ওই সময় তাঁর শরীরে কোনো চিহ্ন ছিল না।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, তাঁরা যতটুকু জানতে পেরেছেন, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই নারী পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। তারপর তাঁকে নওগাঁ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সিটি স্ক্যান করে তাঁরা জানতে পেরেছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। তাঁর মাথায় ছোট্ট একটি লাল দাগ ছিল। শরীরে অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
নিহত সুলতানার ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত বলেন, ‘আমার মা চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। র্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যাঁর কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে র্যাবের কর্মকর্তা মেজর নাজমুস সাকিব বলেন, আটকের পর ওই নারীকে র্যাবের কোনো ক্যাম্পে নেওয়া হয়নি। আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকেই তাঁর পরিবারের লোকজন মৃত্যুর আগপর্যন্ত তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। নির্যাতনের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটা সঠিক নয়।
নিহত সুলতানার মামা নাজমুল হক বলেন, ১৭ বছর আগে সুলতানার সঙ্গে তাঁর স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর এক সন্তানকে নিয়ে অত্যন্ত কষ্ট করে বড় করছিলেন তিনি। শহরের জনকল্যাণ এলাকায় একটা ভাড়া বাড়িতে থেকে ছেলেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। তিনি ভূমি কার্যালয়ের একজন সামান্য কর্মচারী। কোনো দিন তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ কেউ করেননি।