রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে জাতিসংঘের অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসে। এ বিষয়ে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ইস্যু ও অগ্রাধিকারবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান ও অন্য সংখ্যালঘুদের বিষয়ে জাতিসংঘের আসন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন নিয়ে আলোচনা করতে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ রোহিঙ্গা ইস্যুর টেকসই সমাধানের জন্য জরুরি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি এই ইস্যুর দ্রুত ও টেকসই সমাধানের জন্য সম্মেলন যাতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সংগঠিত করার জন্য মহাসচিবকে অনুরোধ জানান।
বৈঠকে ড. রহমান রাখাইন রাজ্যের গুরুতর মানবিক পরিস্থিতির কথাও তুলে ধরেন এবং সতর্ক করে দেন যে, আসন্ন দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সংঘাত বিধ্বস্ত রাষ্ট্রকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে। তিনি মানবিক পরিস্থিতির আরও অবনতি রোধ, জীবিকা পুনরায় চালু করা এবং এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য সক্ষম পরিবেশ তৈরিতে রাষ্ট্রটিতে জাতিসংঘের নেতৃত্বে গৃহীত উদ্যোগগুলোকে সমর্থনের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তিনি বাহ্যিক তহবিল পরিস্থিতির অবনতির দিকে মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি ত্রাণদাতা ও গ্রহীতাদের অবাধ প্রবেশাধিকার এবং সহিংসতা, ভয়ভীতি, বৈষম্য ও বাস্তুচ্যুতি থেকে মুক্ত এবং বিমান হামলা ও বোমা হামলা বন্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য মহাসচিবকে অনুরোধ করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজার ও রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা স্মরণ করেন এবং পদ্ধতিগত বৈষম্য ও মৌলিক অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য তার উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আট বছর ধরে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের অব্যাহত উদারতার প্রশংসা করেন । সংকটময় এই মুহূর্তে রাখাইনে জাতিসংঘের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের অপরিহার্য ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি। তিনি রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে জাতিসংঘের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এসব কার্যক্রমে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে সহায়তার আশ্বাস দেন মহাসচিব।
ড. রহমান প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সংস্কার প্রচেষ্টা সম্পর্কে মহাসচিবকে অবহিত করেন এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের জোরালো ভূমিকার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব দাভোসে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার সাম্প্রতিক বৈঠকের কথা স্মরণ করেন এবং সংস্কার প্রচেষ্টার প্রতি দৃঢ় সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।