একটি গোলের জন্য মাথা খুটে মরলেন যেন। যোগ করা সময়ে এককভাবে এগিয়ে শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুতেই আর কিছু হলোন। পর্বত-সমান মরক্কোর রক্ষণ ভাঙা দূরে থাকা আঁচড়ও পড়ল না। রোনালদোরা যখন হতাশায় ভাসছিলেন। তখন নতুন রূপকথার এক গল্প লেখা উচ্ছ্বাসে ভাসছে মরক্কো।
ম্যাচে দুই দলই হাই প্রেসিংয়ে শুরু করে খেলা। চতুর্থ মিনিটেই ফ্রি কিক থকে গোলে করে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় পর্তুগাল। তবে জোয়াও ফেলিক্সের হেড ঠেকিয়ে দেন মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনু। পরের মিনিটে প্রতি আক্রমণে পর্তুগিজ রক্ষণে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল আফ্রিকার দেশটি। তবে সে যাত্রায় বেঁচে যায় পর্তুগিজরা।
গোলের লক্ষ্যে দুই দলই প্রথম থেকে আক্রমণে চোখ রাখে। প্রথম ২০ মিনিটে সেট পিস ও লং বল থেকে একাধিকবার আতঙ্ক ছড়ায় পর্তুগাল। আর মরক্কো চেষ্টা করে ওয়ান টাচ ফুটবলের সৌন্দর্যে পর্তুগালকে চমকে দিতে। পাশাপাশি ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েও সুযোগ তৈরির চেষ্টা করেছে তারা। তবে সহজ সুযোগ বলতে যা বোঝায় তা পায়নি কোনো দলই। দুই দলই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করায় অ্যাটাকিং থার্ডের বদলে মাঝ মাঠেই খেলা হয়েছে বেশি।
৩১ মিনিটে ফেলিক্সের হাফ-ভলি মরক্কোর খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে বাইরে চলে যায়। রক্ষণে এদিন চোটের কারণে সেন্টার ব্যাক নায়েফ আগুয়ের্দ ও ফুল ব্যাক নুসাইর মাজরাউয়ির অনুপস্থিতি ভুগিয়েছে মরক্কোকে। তবে আক্রমণে বেশ সাবলীল ছিল তাঁরা।
৩৪ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণে ডি-বক্সের ভেতর ফাঁকা জায়গা বল পেয়েও বল লক্ষ্যে রাখতে পারেননি সেলিম আমাল্লাহ। তবে ওয়ান-টাচ ফুটবলের সৌন্দর্যে ৪২ মিনিটে ঠিকই এগিয়ে যায় মরক্কো। ইয়াহিয়া আত্তাতের ক্রসে শূন্যে ভেসে দারুণ এক হেডে অ্যাটলাস সিংহদের এগিয়ে দেন ইউসেফ এন-নেসারি। ৪৫ মিনিটে দুরূহ কোণ থেকে ব্রুনো ফার্নান্দেজের এক নৈপুণ্যের প্রচেষ্টা মরক্কোর পোস্ট কাঁপিয়ে বাইরে চলে যায়।
বিরতির পর শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয়। ৫২ মিনিটে মাঠে নামেন রোনালদো। নেমেই বাঁ প্রান্ত দিয়ে দারুণ একটি ক্রসও করেন। তবে সেটি থামিয়ে দেন বুনু। পর্তুগালের আক্রমণের চাপে এ সময় কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে মরক্কো। ৫৮ মিনিটে গনসালো রামোসের হেড পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। ৬৪ মিনিটে ডি–বক্সের বাইরে থেকে ফার্নান্দেজের শট পোস্টের ওপর দিয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে পর্তুগিজ রক্ষণে তেমন কোনো ভীতিই ছড়াতে পারেনি ৬৮ মিনিটে ফার্নান্দেজের ক্রসে রোনালদো মাথা ছোঁয়াতে পারলে বদলে যেত ম্যাচের মোড়।
আক্রমণের পর আক্রমণে মরক্কোর রক্ষণকে নাকাল করেও কাজের কাজটি কতে পারছিল না পর্তুগাল। রোনালদো–ফার্নান্দেজদের কোনো প্রচেষ্টায় অ্যাটলাস পর্বত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আফ্রিকার দেশটির দেয়াল ভাঙতে পারছিল না। পর্তুগালের বৃথা চেষ্টাগুলোর মাঝেই ম্যাচ গড়িয়ে যাচ্ছিল গধূলির দিকে। রোনালদোর বিশ্বকাপ স্বপ্নের বাতিটাও তখন ধীরে নিভে আসছিল। বিপরীতে নতুন এক ইতিহাস হাতছানি দিয়ে ডাকছিল মরক্কোকে। ৮৩ মিনিটে রোনালদোর থামিয়ে দেওয়া বলে বুলেট গতির এক শট নেন ফেলিক্স। কিন্তু সেই শট দারুণভাবে থামিয়ে দেন বুনু।