রেকর্ড ভাঙা দামে রিয়াল মাদ্রিদে আর্জেন্টিনার ১৭ বছরের ‘মাস্তান’

0
10
ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো।রিয়াল মাদ্রিদ ওয়েবসাইট

বয়স মাত্র ১৭। কিন্তু এরই মধ্যে তাঁর পেছনে ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলোর লাইন লেগেছে, এই খবর আগেই বেরিয়েছিল। নতুন খবর হচ্ছে, অন্য সব ক্লাবকে পেছনে ফেলে শেষ পর্যন্ত ১৭ বছর বয়সী সেই আর্জেন্টাইনকে কিনে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ও হ্যাঁ, নামটাই তো বলা হয়নি সেই বিস্ময়বালকের—ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো!

আর্জেন্টিনার ক্লাব রিভার প্লেটের কাছ থেকে তাঁকে কিনে নেওয়ার খবরটা আজ রিয়াল মাদ্রিদই দিয়েছে তাদের ওয়েব সাইটে। মাস্তানতুয়োনোর আগে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানো সর্বশেষ আর্জেন্টাইন ছিলেন আনহেল দি মারিয়া (২০১০ সালে)।

মাস্তানতুয়োনোর জন্ম বুয়েনস এইরেসের আজুল শহরে। শৈশবে অবশ্য ফুটবল ও টেনিস দুটোতেই  আগ্রহ ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টাইনদের সবচেয়ে বড় আবেগ ফুটবলকেই বেছে নেন। ২০১১ সালে রিভার দি আজুলের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে মাস্তানতুয়োনোর প্রাতিষ্ঠানিক ফুটবল-যাত্রা শুরু। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন।

এরপর ক্লাব সিমেন্টোতে এক বছর থেকে তিনি চলে যান আর্জেন্টিনার সেরা ক্লাবগুলোর একটি রিভার প্লেটে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ক্লাবটির বয়সভিত্তিক দলে খেলেন। গত বছরই  ক্লাবের মূল দলে অভিষেক হয় তাঁর।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে রিভার প্লেটের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী গোলদাতা হিসেবে রেকর্ড গড়ে চলে আসেন সবার নজরে। রিভার প্লেটের হয়ে জেতেন আর্জেন্টাইন সুপার কাপ। শুধু তাই নয়, গত ৬ জুন চিলির বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে মাত্র ১৭ বছর ৯ মাস ২২ দিন বয়সে আর্জেন্টিনার হয়ে অভিষেক হয় তাঁর। আর্জেন্টিনার হয়ে অফিশিয়াল ম্যাচ খেলা সর্ব কনিষ্ঠ খেলোয়াড়ও এখন মাস্তানতুয়োনোই!

অনুশীলনে প্রস্তুত হচ্ছেন মাস্তানতুনো
অনুশীলনে প্রস্তুত হচ্ছেন মাস্তানতুনোইনস্টাগ্রাম

কেমন খেলোয়াড় মাস্তানতুয়োনো

চিলির বিপক্ষে সেদিন ম্যাচের ৮৪ মিনিটে থিয়াগো আলমাদার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মাস্তানতুয়োনো। বাকি সময়ে তিনি বল স্পর্শ করেন ৮বার, ৩টি পাস দিয়েছেন, তিনটি-ই ছিল সফল। তবে আর্জেন্টিনার বাইরে বেশির ভাগ ফুটবলপ্রেমীর কাছে মাস্তানতুয়োনো এখনো অচেনা এক নাম। অনেকেই তাকে  ‘নেক্সট মেসি’ বলছেন, আবার কারও কারও চোখে তাঁর খেলার সঙ্গে কলম্বিয়ার হামেস রদ্রিগেজের মিল আছে।

অনেকে বলছেন, ছেলেটার বাঁ পা খুব ভালো কিন্তু গতি কম। বিশুদ্ধ উইঙ্গার নন, বরং একজন ‘নম্বর ১০’। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। মাঝমাঠ থেকে খেলা গড়ে তোলেন। বলের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ, ছোট জায়গায় ঘুরে যাওয়া আর দূর থেকে শুটিং দক্ষতা তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে দেয়।

৬ জুন চিলির বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আর্জেন্টিনা দলে অভিষেক হয়েছে মাস্তানতুয়োনোর।
৬ জুন চিলির বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আর্জেন্টিনা দলে অভিষেক হয়েছে মাস্তানতুয়োনোর।এএফপি

ট্রান্সফার ফি: আর্জেন্টিনার ইতিহাসে সবচেয়ে দামি

রিয়াল মাদ্রিদ এই চুক্তিতে টাকার অঙ্কটা জানায়নি। কিন্তু রিভার প্লেট ঠিকই জানিয়ে দিয়েছে। তাদের বিবৃতি অনুযায়ী, এই চুক্তিটা ৬ কোটি ৩২ লাখ ইউরোর! এর মধ্যে ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরো সরাসরি রিভার প্লেটের পকেটে যাচ্ছে, যেটা আসলে মাস্তানতুয়োনোর রিলিজ ক্লজই ছিল। বাকি টাকা বিভিন্ন ধরনের কর, ফুটবলার অ্যাসোসিয়েশন, এএফএ ফান্ড এবং অন্যান্য ফি হিসেবে খরচ হচ্ছে।

ট্রান্সফার ফির হিসাবে আর্জেন্টিনা থেকে দলবদল করা ফুটবলারদের মধ্যে মাস্তানতুয়োনোই সবচেয়ে দামি! এর আগে ২০২২-২৩ মৌসুমে রিভার প্লেট থেকে এনজো ফার্নান্দেজ বেনফিকায় যোগ দিয়েছিলেন ৪ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার ইউরো ট্রান্সফার ফি-তে।

রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ২০৩১ সাল পর্যন্ত ছয় বছরের চুক্তি মাস্তানতুয়োনোর। শোনা যাচ্ছে, প্রতি বছর তার নেট বেতন হবে প্রায় ৩৫ লাখ ইউরো! আর তাকে দলে ধরে রাখতে রিয়াল মাদ্রিদ তার রিলিজ ক্লজ রেখেছে ১০০ কোটি ইউরো!

কবে মাঠে দেখা যাবে তাঁকে

মাস্তানতুয়োনো আগামী আগস্টে ১৮ বছর বয়স হলে তারপর রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেবেন। তবে তার আগে ক্লাব বিশ্বকাপে রিভার প্লেটের জার্সিতেই তাকে দেখা যাবে। কেন এত টাকা দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ তাকে কিনেছে, সেটা বোঝার জন্য নিশ্চয়ই  ক্লাব বিশ্বকাপে তার ওপর চোখ রাখবেন রিয়াল সমর্থকেরা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.