রূপপুরের সরঞ্জাম নিয়ে ফিরে যাচ্ছে রুশ জাহাজ

0
198
স্পার্টা-৩ জাহাজ

ইউক্রেন সংকটের পটভূমিতে রাশিয়ার ওপর দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা একটি রুশ জাহাজ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে না পেরে পণ্য ভারতে খালাসের চেষ্টাও সফল হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য জানায়।

উরসা মেজর নামে রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজটি ওই পণ্য নিয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর আগেই ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জানায়, ওই জাহাজটি আসলে ‘উরসা মেজর’ নয়। এটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ‘স্পার্টা-৩’ জাহাজ। রং ও নাম বদল করে সেটি রূপপুরের পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে। জাহাজটির আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থার (আইএমও) সনদ নম্বর ৯৫৩৮৮৯২, যা প্রকৃতপক্ষে ‘স্পার্টা-৩’-এর সনদ নম্বর। যাচাই করে বাংলাদেশ বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে জাহাজটি বন্দরে ভিড়তে নিষেধ করে দেয়।

পরে জাহাজটি পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে গিয়ে পণ্য খালাসের চেষ্টা করে। সংশ্নিষ্ট স্থানীয় এজেন্ট সেখান থেকে পণ্য বাংলাদেশের রূপপুরে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল বলে জানা যায়। তবে তাও সম্ভব হয়নি।
তাৎক্ষণিক জাহাজের অবস্থান শনাক্তকরণ-সংক্রান্ত ওয়েবসাইট গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ইন্টেলিজেন্স মেরিন ট্রাফিক ওয়েবসাইটের ১৫ জানুয়ারি সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, জাহাজটি বঙ্গোপসাগরে ভারতের অংশে মাঝসমুদ্রে নোঙর করেছিল। তবে গতকাল বুধবার সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়, জাহাজটি ভিড়তে না দেওয়ায় সেটি রাশিয়ার উদ্দেশে ফিরে যাচ্ছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে বিব্রত অবস্থায় রয়েছে রাশিয়া। বাংলাদেশ সরকারের সমস্যা বুঝতে পারছে দেশটি। ভারতের বন্দরে শুধু জাহাজে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গগুলোর সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরঞ্জাম নামাতে দেওয়া হয়নি।

নাম না প্রকাশের শর্তে এক কূটনীতিক জানান, ভারতের বন্দরেও জাহাজটির পণ্য খালাসে বাদ সেধেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের ওপরও চাপ প্রয়োগ করেছে তারা। ফলে দিল্লি জাহাজটি থেকে পণ্য খালাসের অনুমতি দেয়নি।
দীর্ঘদিনের নানা ধাপে আলোচনা ও চুক্তিপত্রগুলো স্বাক্ষরের পর রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি সংস্থা রোসাটম পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায় পদ্মাপাড়ের রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের বাস্তব কাজ শুরু করে ২০১৭ সালে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ পড়ে উভয় চাপে। মার্কিন পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের নিষেধাজ্ঞায় থাকা কোনো জাহাজকে তৃতীয় দেশ সুযোগ-সুবিধা দিলে সেই দেশও নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে পড়বে। আবার রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জাহাজটি খালাস না হতে দিলে তা দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে যেহেতু দায়িত্ব স্থানীয় এজেন্টের পণ্য প্রকল্প এলাকাতে পৌঁছে দেওয়া, তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাহাজটি বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকলেও ভারত বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাহাজের পণ্য খালাসের ঝুঁকি নেয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জাহাজটি ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থানীয় এজেন্টকে জানানোর পরে বিষয়টি নিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকসান্দর মান্তিতস্কি। রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়, নিষেধাজ্ঞায় থাকা জাহাজ বাংলাদেশ বন্দরে ভিড়তে দেবে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ রূপপুরের পণ্য খালাসের জন্য বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সব সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রকল্প এলাকা পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের দায়িত্ব স্থানীয় এজেন্টের। তারা কীভাবে পণ্য নিয়ে আসবে, এটি তাদের বিষয়। নিষেধাজ্ঞায় থাকা জাহাজ ভিড়তে দিয়ে ঝুঁকি নেবে না ঢাকা। আর নিষেধাজ্ঞা যেহেতু রাশিয়ার ওপর, ফলে বিষয়টি তাদের সমাধান করতে হবে। এজেন্ট চাইলে মাঝসমুদ্রে জাহাজ বদল করে পণ্য নিয়ে আসতে পারে।

এ বিষয়ে কথা হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই এবং কোনো মন্তব্যও করতে চাই না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.