রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে শেখ হাসিনা আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান করুন

0
138
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ

আলোচনার মাধ্যমে এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ গতকাল শুক্রবার গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ ও দায়িত্বশীল অবস্থানের প্রশংসা করেন ল্যাভরভ।

বাসস জানায়, সাক্ষাৎকালে করোনা মহামারি, যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে খাদ্য, জ্বালানি ও সারের সংকটে উন্নয়নশীল দেশগুলো যাতে অর্থনৈতিক ঝুঁকির সম্মুখীন না হয়, সে জন্য একটি সমাধান খুঁজে বের করতে রাশিয়ার প্রতি অনুরোধ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব শান্তিপূর্ণ উপায়ে যুদ্ধ বন্ধ করা প্রয়োজন।

ল্যাভরভের সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সাক্ষাৎকালে উভয় নেতা বলেছেন, বাংলাদেশ ও রাশিয়া দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু। তারা এ সম্পর্ক আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বন্ধুত্বপূর্ণ দুটি দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশে রাশিয়ার আরও বেশি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন। এ ব্যাপারে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তারা বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের পাশাপাশি বাংলাদেশ  থেকে তৈরি পোশাক পণ্য আমদানির কথা ভাবছেন। ল্যাভরভ বাংলাদেশের কাছে তৈরি পোশাক পণ্য আমদানি এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আহ্বান করেন, যা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হবে। তিনি দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ ও দায়িত্বশীল অবস্থান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশ  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৃহীত পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করে– ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়।’

সাক্ষাৎকালে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আগামী অক্টোবরে পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি করা হবে। তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান।

এ ছাড়া, রাশিয়া থেকে সার আমদানির জন্য দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির উপায় খোঁজার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। রাশিয়া থেকে তিন লাখ টন গম আমদানি সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়েও  আলোচনা হয়েছে। ল্যাভরভ বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ সময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা

এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এ শ্রদ্ধা জানান তিনি।

জাদুঘর পরিদর্শন এবং পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন ল্যাভরভ। পরিদর্শন বইয়ে তিনি লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করে আনন্দিত। দেশের স্বাধীনতার জন্য একজন যোদ্ধা হিসেবে আমরা তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্মরণ করি। সোভিয়েত ইউনিয়ন তাঁর লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা করেছে এবং প্রথম দিকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন অন্যতম। অভিন্ন ইতিহাস ও দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থে বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আমরা লালন করি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.