ঢাকার প্রবেশমুখে আজ পাল্টাপাল্টি অবস্থান

0
97

রাজধানীর প্রবেশমুখে আজ শনিবারও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে গতকাল শুক্রবার নয়াপল্টনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চারটি প্রবেশপথ– উত্তরা, গাবতলী, নয়াবাজার এবং যাত্রাবাড়ীর দনিয়ায় পাঁচ ঘণ্টার এ কর্মসূচি পালন করবে বিরোধী দলটি। অন্যদিকে, গত রাতেই শান্তি সমাবেশের নামে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। ওই চারটি প্রবেশমুখে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু করে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করবে তারাও। তবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হবে এই কারণে কোনো দলকেই কর্মসূচির অনুমতি দেয়নি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শেষ পর্যন্ত ঘোষিত কর্মসূচি পালনে অনড় বিএনপি। পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়ানোর আভাস দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

মহাসমাবেশ থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সব প্রবেশমুখে শনিবার বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণার পর প্রবেশপথগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ডিএমপি। প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে গতকাল রাতে জানায় ডিএমপি। যাতে বিএনপি নেতাকর্মীরা সেসব স্থানে জড়ো হতে না পারেন এজন্য গতকাল রাত থেকে সেসব স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। এ ছাড়া রায়টকার, জলকামান ও এপিসি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক গতকাল রাতে জানান, শনিবার বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন রাজধানীর সব প্রবেশমুখে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কোনো রাজনৈতিক দল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছ থেকে এই অবস্থান কর্মসূচি পালনের অনুমতি নেয়নি। আইনশৃঙ্খলা অবনতির গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও জনদুর্ভোগ বিবেচনায় শনিবার অবস্থান কর্মসূচি পালনে কোনো রাজনৈতিক দলকেই অনুমতি দেয়নি ডিএমপি।

পুলিশের অনুমতির বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান জানান, কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এখন এই কর্মসূচি অবশ্যই পালন করা হবে যে কোনো মূল্যে। এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কর্মসূচির জন্য এরই মধ্যে পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করব। এটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে উত্তরা বিএনএস সেন্টারের উল্টো দিকে রাস্তার পূর্বপাশের কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, গাবতলী এসএ খালেক বাসস্ট্যান্ডের সামনে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে নয়াবাজার দলীয় অফিসের সামনের কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভারের পূর্বপাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড দনিয়া কলেজ সংলগ্ন স্থানের কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আজ শনিবার রাজধানীর চারটি প্রবেশমুখে শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি প্রতিবাদ সমাবেশ করবে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু করে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হবে। এই চারটি প্রবেশমুখ হচ্ছে– গাবতলী, উত্তরা, যাত্রাবাড়ীর দনিয়া ও নয়াবাজার। তবে পুলিশের নিষেধাজ্ঞার পর এ নিয়ে আজ দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। আজ সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন এবং সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি প্রতিহত করতে আজ রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। ঢাকা মহানগরের প্রবেশ পথগুলোতে অবস্থান নেবেন নেতাকর্মীরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি জানিয়েছেন, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় গাবতলী বাস টার্মিনালে প্রতিবাদ সমাবেশের প্রস্তুতি রয়েছে। এ ছাড়া উত্তরা, টঙ্গী ও আব্দুল্লাহপুরে অবস্থান করার পাশাপাশি প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করা হতে পারে।

অন্যদিকে যাত্রাবাড়ীর দনিয়া ও নয়াবাজারে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। তিনি বলেছেন, প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড কমিটির নেতাকর্মীও সার্বক্ষণিকভাবে সতর্ক অবস্থানে থাকবেন। এ ছাড়া বাবুবাজার, সাইনবোর্ড, কাঁচপুর ব্রিজ, শনির আখড়া, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী ব্রিজ, গাবতলী, আমিন বাজার ও দোলাইরপাড়ে শান্তি সমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে যুবলীগ।

কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা ধারাবাহিক যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরের সব প্রবেশমুখে শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচি পালন করবে। প্রশাসন শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালন করতে দিয়ে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এ সময় সমাবেশে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মুহুর্মুহু স্লোগান দেন।

এ মহাসমাবেশটি বৃহস্পতিবার করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। একই দিন আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে শান্তি সমাবেশের নামে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। কর্মদিবসে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির কথা বলে কোনো দলকেই অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। বুধবার রাতে বিএনপির পক্ষ থেকে এক দিন পিছিয়ে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। বিএনপি শুক্রবারের কর্মসূচি ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই কর্মসূচি পিছিয়ে শুক্রবার করার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগের সংগঠন তিনটি।

এর আগে গত ডিসেম্বরে ঢাকার গোলাপবাগের সমাবেশ থেকে ১০ দফার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। ওইদিন পাল্টা কর্মসূচি পালন করে ক্ষমতাসীন দল। পরে গত ১২ জুলাই নয়াপল্টনে এক সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবি ঘোষণা করে সমমনা দল ও জোটকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। সেদিনও পাল্টা কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ। এর পর এ দাবিতে তারা গত ১৮ ও ১৯ জুলাই ঢাকাসহ সারাদেশে পদযাত্রার কর্মসূচি পালন করেছে।

বিএনপি সমমনাদের কর্মসূচি
রাজধানীর চারটি স্থানে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি সমমনা অন্যান্য জোট ও দলও একই কর্মসূচি পালন করবে। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে মিরপুর মাজার রোডে; ১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড দনিয়া কলেজগেট এলাকায়; গণফোরাম ও পিপলস পার্টির উদ্যোগে মতিঝিল নটর ডেম কলেজের উল্টোদিকে গণফোরাম চত্বর; জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের উদ্যোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড সাইনবোর্ড; এলডিপির উদ্যোগে উত্তর আজমপুর বাসস্টেশন সংলগ্ন এবং গাবতলী টেকনিক্যাল মোড় ও যাত্রাবাড়ী মোড়; গণঅধিকার পরিষদ উত্তর আজমপুর ওভারব্রিজ সংলগ্ন এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড শনির আখড়া ওভারব্রিজ সংলগ্ন; এনডিএমের উদ্যোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড সাইনবোর্ড সংলগ্ন এলাকায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.