রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে আসিফ নজরুলের সঙ্গে একমত সরকার

0
10
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর সরকার
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে পদ থেকে সরানোর বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সঙ্গে একমত সরকার।
 
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর সরকারের একমতের বিষয়টি তুলে ধরেন।
 
তিনি বলেন, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এর পদে থাকার বিষয়ে) যা বলেছেন, তার সঙ্গে সরকার একমত পোষণ করে। তবে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে পদ থেকে সরানোর বিষয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার।
 
এর আগে অপূর্ব জাহাঙ্গীরকে প্রশ্ন করা হয়, রাষ্ট্রপতি ‘মিথ্যাচার’ বলে তার পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একজন উপদেষ্টা (আইন উপদেষ্টা) যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা তার ব্যক্তিগত না পুরো উপদেষ্টা কাউন্সিলের।
 
দেশত্যাগ করা শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এক সাংবাদিককে বলেন, আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি। ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে দশটায় বঙ্গভবনে ফোন এলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে। বলা হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে আসবেন মহামান্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। এটা শুনেই প্রস্তুতি শুরু হলো বঙ্গভবনে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফোন এলো তিনি আসছেন না।
 
রাষ্ট্রপতি বললেন, চারদিকে অস্থিরতার খবর। কী হতে যাচ্ছে জানি না। আমি তো গুজবের ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারি না। তাই সামরিক সচিব জেনারেল আদিলকে বললাম খোঁজ নিতে। তার কাছেও কোনো খবর নেই। আমরা অপেক্ষা করছি। টেলিভিশনের স্ক্রলও দেখছি। কোথাও কোনো খবর নেই। এক পর্যায়ে শুনলাম, তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আমাকে কিছুই বলে গেলেন না।
 
তিনি বলেন, ‘সব কিছু যখন নিয়ন্ত্রণে এলো তখন একদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এলেন পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহ করতে। তাকে বললাম, আমিও খুঁজছি’।
 
এর পরেই আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি বলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করে শপথের লঙ্ঘন করেছেন।
 
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে তার থাকার যোগ্যতা আছে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উনি যদি তার বক্তব্যে অটল থাকেন তাহলে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে যাবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
 
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা মতামত দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি স্ববিরোধিতা করছেন। তার এ পদে থাকার আর অধিকার নেই। ভাষণে তিনি বলেছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। এখন আড়াইমাস পরে এ কথা কীভাবে বলেন? তিনি রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন না।
 
বিষয়টি নিয়ে চারদিকে যখন সমালোচনা শুরু হয় তখন এক বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন স্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরেন।
 
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি মীমাংসিত এবং এ বিষয়ে নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল কিংবা বিব্রত করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
 
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের উপপ্রেস সচিব শিপলু জামানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন মিডিয়ায় যে প্রচারণা চালানো হয়েছে তা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সুস্পস্ট বক্তব্য হচ্ছে, ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার উপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে সেগুলোর যাবতীয় উত্তর স্পেশাল রেফারেন্স নং-০১/২০২৪ এ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গত ৮ আগস্ট, ২০২৪ এর আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে।
 
আরও বলা হয়, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি গত ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত চাওয়ার প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ এই মতামত দিয়েছিলেন। মীমাংসিত এই বিষয়ে নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল কিংবা বিব্রত করা থেকে বিরত থাকার জন্য রাষ্ট্রপতি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
 
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মীমাংসিত এ বিষয়ে নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল কিংবা বিব্রত করা থেকে বিরত থাকার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.