
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় ভারত সীমান্তঘেঁষা ১০টি গ্রামে বন্য হাতির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। খাবারের সন্ধানে প্রতি রাতেই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে হাতির পাল। গুঁড়িয়ে দিচ্ছে সুপারি ও অন্যান্য গাছের বাগান, নষ্ট করছে ফসলি জমি। আক্রমণ থেকে বাঁচতে নির্ঘুম রাত কাটছে গ্রামবাসীর।
কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রায় ৪০টি হাতির একটি পাল সীমান্তবর্তী পাহাড়ে অবস্থান করছে। এর মধ্যে গত সোমবার থেকে প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর উপজেলার ধানুয়াকামালপুর ইউনিয়নের বালুরচর, সাতানীপাড়া, সোমনাথপাড়া, অশেনাকোনা, টিলাপাড়া, পাগলাগোছা, দিঘলকোনা, গারোপাড়া, রামক্ষণজোড়া ও হাতিবারকোনা গ্রামে হানা দিচ্ছে। হাতির পালটি দিনের বেলায় পাহাড়ে অবস্থান নেয় আর সন্ধ্যা হলেই লোকালয়ে ঢুকে পড়ে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন গ্রামে প্রবেশ করে হাতির পাল। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় পালটি সাতানীপাড়া এলাকায় ঢুকে ধানখেত, সবজিখেত মাল্টা ও লেবুর বাগান তছনছ করেছে। গ্রামবাসীর হইহুল্লোড়, মশালের আলো ও ঢাকঢোলের শব্দে হাতিরা ঘরবাড়িতে ঢুকতে পারেনি। তবে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নষ্ট করেছে। সারা রাত তাণ্ডব চালিয়ে ভোরে তারা পাহাড়ে ফিরে যায়।
বুধবার সাতানীপাড়া এলাকার মাসুদ মিয়ার ধানখেত নষ্ট করে গেছে। তিনি বলেন, ভারতের কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে প্রায় ৪০টি ছোট-বড় হাতি হানা দিচ্ছে। একেক দিন একেক এলাকায় হানা দেয়। শুধু তাঁর নয়, এলাকার আমিনুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, আল-মামুন, ইয়াকুব আলীসহ প্রায় ৩০ জনের ধানখেত, বিভিন্ন সবজির খেত ও গাছপালা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। হাতির আতঙ্কে গ্রামবাসীরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
বকশীগঞ্জের এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্য মো. আজাদ মিয়া বলেন, সোমবার রাতে বালুরচর গ্রামে ঢুকেছিল হাতির পালটি। প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পরই লোকালয়ে ঢুকছে। গতকাল রাতে সাতানীপাড়ায় ঢোকে। এলাকাবাসী ও তাঁদের তৎপরতায় ঘরবাড়িতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি করতে পারেনি। এলাকাবাসীকে নিয়ে হইহুল্লোড়, মশালের আলো ও ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতির পালটিকে পাহাড়ের দিকে নিতে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন।
গারোপাড়া এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, তাঁরা পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ ও পাহাড়ের পাদদেশে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিবছর এ সময়ে হাতির আক্রমণ হয়। হাতির আতঙ্কে অনেক জমি পতিত রাখতে হয়। হাতির তাণ্ডবের কারণে অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যান।
ধানুয়াকামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) গোলাপ জামাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তঘেঁষা গ্রামগুলোতে হাতির আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রতিবছরই বিভিন্ন সময় হাতির পাল এসব গ্রামে ঢুকে ফসল ও ঘরবাড়ি নষ্ট করে। কয়েক দিন ধরে আবার আক্রমণ শুরু হয়েছে। হাতির সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

বকশীগঞ্জের ডুমুরতলা বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, হাতির পালটি দিনের বেলা পাহাড়ে অবস্থান করে। সন্ধ্যা হলেই খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকছে। তাঁদের চারটি এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের ব্যাপক তৎপরতায় এলাকাবাসীর ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়নি। তবে পাহাড়ের কাছে থাকা ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। তাঁদের একসঙ্গে দুটি কাজ করতে হচ্ছে। একদিকে হাতির যাতে ক্ষতি না হয় আবার গ্রামবাসীর যাতে ক্ষতি না হয়। তাঁরা মাইকিং করে গ্রামবাসীকে সতর্ক করেছেন, যাতে হাতির ক্ষতি না করেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা বলেন, সীমানার ওপারে ভারতের বনাঞ্চলে অনেক হাতির বাস। খাবারের সন্ধানে বোরো, আমন মৌসুমসহ সময়ে-অসময়ে হাতির পাল সীমান্তবর্তী এলাকায় চলে আসে। যেসব এলাকায় হাতির কারণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেসব এলাকার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গ্রামবাসীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।