
বন বিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের রাতভর চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ির এলাকার আগুন।
এদিকে কলমতেজী টহল ফাঁড়ি এলাকা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নতুন করে বড় এলাকাজুড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে। আজ রোববার সকাল পৌনে ৯টার দিকে ড্রোন উড়িয়ে ওই ধোঁয়া দেখতে পান সংবাদকর্মীরা। পরে বন বিভাগ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গুলিশাখালী বন টহল ফাঁড়ি এলাকার অন্তত ৩টি এলাকায় আগুনের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে।
তিন থেকে চারটি স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ধোঁয়া দেখতে পাওয়া যাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন বন বিভাগের এক কর্মকর্তা। সেখানে দ্রুত ধোঁয়া বাড়ছে বলে জানান তিনি। তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট বন অফিসের কর্মীদের ঘটনাস্থলের দিকে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গতকাল শনিবার সকাল কলমতেজী টহল ফাঁড়ির টেপার বিল এলাকায় আগুনের ধোঁয়া দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন বন বিভাগকে জানান। দুপুর থেকে বন বিভাগ, সিপিজি, ভিটিআরটি, টাইগার টিমের শত শত লোকজন কাজ শুরু করেন। বিকেলের মধ্যে ফায়ারলাইন কাটা শেষ করে বন বিভাগ। সন্ধ্যার আগে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে গেলেও পানি দিতে পারেনি। পানির উৎস দূরে হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়।
গতকাল রাত ৯টা থেকে বন বিভাগের নিজস্ব পাম্প ও পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি দেওয়া শুরু হয়। এ বিষয়ে ধানসাগর স্টেশনের কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর দেবনাথ বলেন, ‘বিকেলের আগেই আমরা ফায়ারলাইন কাটা শেষ করি। বন বিভাগের পাম্প ও নিজেদের পাইপলাইনও স্থাপন করি। তবে আগুন লাগার এলাকা পর্যন্ত পৌঁছানো যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে পাইপ ধার করে সন্ধ্যা থেকে আমরা কাজ শুরু করি। পাইপ দিয়ে রাত ৯টা থেকে পানি ছিটানো শুরু করে বন বিভাগ। বন বিভাগ ও স্থানীয় অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবকের রাতভর চেষ্টায় ভোর চারটার দিকে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।’
এর আগে গতকাল দুপুর থেকে বন বিভাগ ও স্থানীয় শত শত লোক আগুন নিয়ন্ত্রণে কোদালের সাহায্যে ফায়ারলাইন কাটার পাশাপাশি কলসি, বালতিতে করে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন।

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি
এদিকে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপন চন্দ্র দাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন ধানসাগর স্টেশনের কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর দাস ও কলমতেজী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে ওই কমিটিকে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান ও বনভূমির ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) সাকরিয়া হায়দার বলেন, বাগেরহাট, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জের পাঁচটি ইউনিট সুন্দরবন–সংলগ্ন ভোলা নদীর তীরে অবস্থান করছে। বন বিভাগের নিজস্ব সেচ পাম্প দিয়ে পানি ছিটানোর কাজ করা হচ্ছে। আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।

সুন্দরবনের যে এলাকায় আগুন লেগেছে, সেখান থেকে মরা ভোলা নদীর দূরত্ব অন্তত ৩ কিলোমিটার। এত দূরত্বে পানি নিয়ে তা দিয়ে আগুন নেভাতে দারুণ বেগ পেতে হচ্ছে। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, ‘গতকাল বেলা একটা নাগাদ বনকর্মীরা চাঁদপাই রেঞ্জের কলমতেজী টহল ফাঁড়ি এলাকায় আগুনের ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখার পর বনকর্মীরা সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। ওই এলাকার আগুন এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। বন বিভাগের সেচপাম্প দিয়ে আগুন নেভানো হচ্ছে। যেখানেই ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে, সেখানেই পানি ছিটানো হচ্ছে।’
গত বছর ৪ মে চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া এলাকায় আগুন লাগে। এ ঘটনায় বনের পাঁচ একর এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত ২৩ বছরে সুন্দরবনে অন্তত ২৬বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, যার প্রায় সব কটিই ভোলা নদী পার্শ্ববর্তী বনের উঁচু এলাকায়।