রাজপথ দখলে নানা কৌশল আ’লীগের

0
131
আওয়ামী লীগের লোগো

আগামীকাল শনিবারের শান্তি সমাবেশ ঘিরে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ। এখন পর্যন্ত পুলিশের অনুমতি না মিললেও পূর্বঘোষিত বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে এই সমাবেশ আয়োজনে অনড় অবস্থানে রয়েছে তারা। শান্তি সমাবেশের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিএনপি ও তার মিত্রদের মহাসমাবেশকে ঘিরে সম্ভাব্য সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ঠেকাতে রাজধানীর রাজপথ দখলে নানা কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।

এই অবস্থায় শান্তি সমাবেশের দু’দিন আগে থেকেই মিছিল-সমাবেশ নিয়ে রাজপথে নেমেছেন সরকার সমর্থক নেতাকর্মী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীজুড়ে মিছিল-সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। সেইসঙ্গে রাজধানীর অলিগলি ও পাড়ামহল্লায় নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। কোনো অবস্থায়ই বিএনপিকে ছাড় না দেওয়ার মনোভাব নিয়েই এগোচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজপথে নেতাকর্মীর অবস্থান আরও জোরদার করা হবে। এই সময় থেকে রাজধানীর চারপাশের সব প্রবেশপথে নেতাকর্মীর পাহারা বসানো হবে। বিএনপির মহাসমাবেশের এক দিন আগে থেকে এমন পাহারা বসানোর ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারক নেতারা। সেই ঘোষণা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট নেতারা।

এদিকে, শান্তি সমাবেশের সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে আওয়ামী লীগ। আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিএনপির মহাসমাবেশ ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকে ঘিরে দেশজুড়ে সৃষ্ট উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিষয়ে দলীয় বক্তব্যও তুলে ধরবেন তিনি।

বায়তুল মোকাররমেই অনড় আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল, ২৮ অক্টোবর দুপুর ২টা থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ব্যানারে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বরাবর লিখিত আবেদন জানানো হয়। পরে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট ছাড়া বিকল্প দুটি স্থানের নাম চেয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। তবে গতকাল পুলিশকে দেওয়া পাল্টা চিঠিতে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ আয়োজনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের অনড় অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, গত বুধবার গভীর রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠিটি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। চিঠিতে শান্তি সমাবেশের দুটি বিকল্প স্থানের নামসহ সাতটি বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হয়। এর জবাবে বৃহস্পতিবার বিকেলে এ আওয়ামী লীগ নেতা তাঁর সই করা এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পল্টন মডেল থানার ওসি কাছে পৌঁছে দেন। চিঠিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সমাবেশের মঞ্চ নির্মাণ ও প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রমসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ায় বিকল্প কোনো ভেন্যুতে শান্তি সমাবেশ করা তাদের পক্ষ থেকে সম্ভব নয়।

শান্তি সমাবেশ বিষয়ে পুলিশের জিজ্ঞাসার জবাবে চিঠিতে আরও বলা হয়, শনিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তাদের সমাবেশ চলবে। সমাবেশে প্রায় ২ লাখ লোক সমাগম হবে। সকাল ১০টা থেকে লোক সমাগম শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টায় শেষ হবে।

রাজপথ দখলের তৎপরতা

বিএনপি ও তার মিত্রদের মহাসমাবেশের কর্মসূচিকে মোকাবিলা করতে আগেভাগে রাজপথ দখলে রাখার প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। রাজধানীর পাড়া-মহল্লা, অলিগলি ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাঠ দখলের তৎপরতা শুরু করেছেন দল ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গত কয়েক দিনের মতো গতকালও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতারা মাঠের নেতাকর্মীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব বৈঠক থেকে নেতাকর্মীকে আজ জুমার পরই রাজপথে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারবিরোধীরা রাজপথে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে নেতাকর্মীরা পাহারায় থাকবেন। প্যান্ডেল বানিয়ে ও চেয়ার-টেবিল নিয়ে তারা আজ দুপুরের পরই এই অবস্থান শুরু করবেন। সরকারবিরোধীদের মোকাবিলা করতে নেতাকর্মীর হাতে থাকবে জাতীয় পতাকাসহ গজারি লাঠি। কিছু লাঠিতে থাকবে সরকারের উন্নয়নচিত্র সংবলিত ফেস্টুন। কোথাও বিরোধীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করামাত্রই প্রয়োজনে ওই লাঠি দিয়েই তাদের শায়েস্তা করা হবে। গণপিটুনি দিয়ে তাদের রাজপথ থেকে তাড়ানো হবে। অবশ্য প্রকাশ্যে নেতারা বলছেন, সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই তাদের এমন প্রস্তুতি। গণপিটুনি বা তাদের ওপর হামলা করা মূল লক্ষ্য নয়। তবে হামলা বা নাশকতা করলে ছাড় দেওয়া হবে না। নেতাকর্মীর এমন অবস্থান বিএনপির মহাসমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলবে। সরকারবিরোধীদের সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে রাস্তায় রাস্তায় মোটরসাইকেল মহড়াও দেবেন নেতাকর্মীরা।

গতকাল কামরাঙ্গীরচর থানা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কর্মী সমাবেশ হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দেন। স্থানীয় কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সমাবেশ থেকে নেতাকর্মীকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। মহাসমাবেশ ঘিরে বিএনপি যাতে কোনো নাশকতা করতে না পারে, সে জন্য রাজপথ না ছাড়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

একই দিন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের আহ্বানে অনুষ্ঠিত সভা থেকে সরকারদলীয় সব কাউন্সিলরকে রাজপথে থেকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সভায় নীতিনির্ধারণী ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সমন্বয়কারী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। আরও ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। ঢাকা-৫ আসনের এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুর নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী এলাকায় মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। তিনি জানান, তাঁর নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি-জামায়াত কোনো নৈরাজ্য ও সহিংসতা করলে ছাড় দেওয়া হবে না। সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করলে সঙ্গে সঙ্গে গণপিটুনি দেওয়া হবে।

একইভাবে যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জাহিদের নেতৃত্বে রোকেয়া সরণির শেওড়াপাড়া থেকে মিছিল এবং মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে সমাবেশ হয়েছে। একই স্পটে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবুর নেতৃত্বে মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। ফার্মগেট এলাকায় কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরানের নেতৃত্বে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদসহ ঢাকা-৮ আসনের সব কাউন্সিলর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। পরে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলীয় কার্যালয়ের সামনেও মিছিল-সমাবেশ হয়।

পুরান ঢাকায়ও একই রকম তৎপরতা চলেছে ক্ষমতাসীন দলের। গতকাল বিকেলে ধোলাইখালের প্রস্তুতি সভায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীসহ মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মন্নাফী বলেন, শনিবার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সেদিনই বিএনপির রাজনীতির কবর দেওয়া হবে। এমনভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হবে যেন বিএনপি-জামায়াত ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ না পায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.