রাজনৈতিক বড় দুই দলের সমাবেশ ঘিরে শুক্রবার রাজধানীতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফলে বড় ধরনের অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এদিকে, বিএনপির ৩৪৫ নেতাকর্মীকে আদালতের মাধ্যমে গতকাল কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার বিএনপির আরও ৪৭৩ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে দুই দিনে ৮১৮ জনকে কারাগারে পাঠানো হলো।
শুক্রবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে গ্রেপ্তারদের হাজির করা হয়। এর পর আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
শুক্রবার ঢাকা মহানগর এলাকার ৩৫টি থানায় পুরোনো বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ২৭৯ জন এবং চারটি থানা থেকে সন্দেহজনক হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫১ ও ১৫৪ ধারায় ৬১ জনকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করে পুলিশ। এ ছাড়া ঢাকা জেলার তিনটি থানা থেকে মোট পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এসব নেতাকর্মীর পক্ষে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা
পল্টন ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকা ছাড়াও ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ও মোড়ে মোড়ে র্যাব-পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিল। এ ছাড়া প্যাট্রোল ডিউটিও ছিল চোখে পড়ার মতো। সাদা পোশাকেও অবস্থান নেন র্যাব-পুলিশের সদস্যরা। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের জলকামান, রায়টকার ও প্রিজনভ্যান রাখা ছিল। মগবাজার, মৌচাক, কাকরাইল, মালিবাগ, শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, মতিঝিল, গুলিস্তান, পল্টন ও শাহজাহানপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়। বড় দুই দল ছাড়া আরও কয়েকটি দলের নেতাকর্মীরা ঢাকা দক্ষিণের পল্টন, বিজয়নগর ও মৎস্য ভবন এলাকায় তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করে। এই এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকায় লোকজনের সমাগম ছিল। কোথাও কোথাও ছুটির দিনেও যানজট দেখা যায়। তবে ঢাকা উত্তর এলাকা ছিল ফাঁকা। এ এলাকায় যানবাহন কম থাকলেও মানুষের তেমন ভোগান্তি হয়নি।
দুপুর ২টায় মগবাজার মোড়ে দেখা যায়, অন্তত ৫০ জন পুলিশ সদস্য সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে একটি প্রিজনভ্যান ও জলকামানের গাড়ি পার্কিং থাকতেও দেখা যায়।
বিজয়নগর পানির ট্যাংকের পাশের মোড়ে পুলিশের ৫০ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানে দায়িত্ব পালনকারী একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিকেলে জানান, তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব ওই এলাকায়। সকাল ৮টা থেকে তারা এসেছেন। সমাবেশ শেষ হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ পাওয়ার পর তারা স্থান ত্যাগ করবেন। পুরানা পল্টন মোড় ঘিরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। পল্টন মোড়ের দক্ষিণ পাশে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনের শান্তি সমাবেশে নেতাকর্মীর সমাগম এবং উত্তর পাশে বিজয়নগরে বিএনপির সমাবেশের নেতাকর্মীর সমাগম, যে কারণে পল্টনে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া ফকিরাপুল, মতিঝিল, আরামবাগ, বংশাল, গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র্যাবের টহল দল ছিল চোখে পড়ার মতো। মানুষের যাতায়াত ও নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ছিনতাই রোধকল্পে ঢাকা দক্ষিণ এলাকায় র্যাবের একাধিক টহল টিম সতর্ক অবস্থায় ছিল। রাজধানীতে একই দিন একই সময় এক কিলোমিটারের মধ্যে বড় দুই রাজনৈতিক দল সমাবেশ কর্মসূচি পালন করলেও নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি হয়নি। বিঘ্ন হয়নি আইনশৃঙ্খলার। শান্তিপূর্ণভাবেই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আমিনবাজারে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি
নিজস্ব প্রতিবেদক সাভার থেকে জানান, ঢাকার প্রবেশপথ সাভারের আমিনবাজার এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করেছে পুলিশ। দুই দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পর থেকেই ঢাকার প্রবেশপথ সাভারের আমিনবাজার এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। শুক্রবার সকাল থেকে আমিনবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় একটি হাসপাতালের সামনে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলেই তাদের হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে পুলিশের প্রিজনভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
আশুলিয়ার কবিরপুর থেকে ঢাকার মিরপুরে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। অন্য যাত্রীদের মতো তাকেও বাস থেকে নামিয়ে তল্লাশির এক পর্যায়ে তার মোবাইল ফোনও চেক করা হয়। তবে সন্দেহজনক কিছু না পাওয়ায় পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেয়। শুধু রফিকুল নন, এরকম অভিযোগ আরও অনেক যাত্রী ও পথচারীর।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহহিল কাফী বলেন, নিয়মিত তল্লাশির অংশ হিসেবে এখানে চেকপোস্ট কার্যক্রম চালানো হয়। কেউ যাতে কোনো ধরনের নৈরাজ্য চালাতে না পারে সে লক্ষ্যেই তল্লাশি করা হয়েছে।
সাভার থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, সাভার ও আশুলিয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীর বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া পথে পথে অনেক নেতাকর্মীকে আটক করা হচ্ছে।
সাভার মডেল থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা জানান, যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা এবং ওয়ারেন্ট রয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে।
কেরানীগঞ্জে আটক অর্ধশতাধিক
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, কেরানীগঞ্জে রাজধানীর তিনটি প্রবেশ পথে পরিবহনে তল্লাশি ও বিএনপি কর্মী শনাক্তে মোবাইল ফোন চেক করেছে পুলিশ। শুক্রবার ভোর থেকে বুড়িগঙ্গা নদীতে চলাচলকারী নৌকা বন্ধ করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাড়ি বাড়ি, তিনটি চেকপোস্ট ও পরিবহনে তল্লাশি চালিয়ে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
টঙ্গীতেও চেকপোস্ট
টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকার প্রবেশমুখ স্টেশন রোড, টঙ্গী ব্রিজ ও আব্দুল্লাহপুর এলাকায় চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। বাস, ট্রাক ও ব্যক্তিগত পরিবহনে চেপেই সমাবেশে রওনা দিয়েছেন হাজারো নেতাকর্মী। তবে সড়কে গণপরিবহনের চাপ কম রয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় আটটি স্থানে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়েছে পুলিশ। তবে অন্য দিনের চেয়ে সড়কে দূরপাল্লার যানবাহন ও গণপরিবহন তুলনামূলক কম দেখা গেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।