চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে রাঙ্গামাটির অর্থনীতিতে। ধীরে ধীরে দেশের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও, এখনও স্বাভাবিক হয়নি এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য। এ কয়দিনে জেলার পর্যটন ও কৃষি খাতে শতকোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে।
কোটা আন্দোলনের প্রভাব কাটিয়ে, রাঙ্গামাটিতে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে জনজীবন। চলছে গণপরিবহন, খুলেছে দোকানপাট। কিন্তু স্থানীয় অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পর্যটন খাতে বিরাজ করছে স্থবিরতা। ‘সিম্বল অব রাঙ্গামাটি’ খ্যাত ঝুলন্ত সেতুতে সুনশান নীরবতা। ঘাটে নোঙ্গর করে আছে শত শত ট্যুরিস্ট বোট। অলস সময় কাটাচ্ছেন পর্যটন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
শুধু পর্যটন খাতই নয়, একই অবস্থা কৃষি পণ্য অবতরণ ঘাটের। মৌসুমী ফলের শেষ পর্যায়ে ঘাটগুলোতে বাগানি, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের হাঁকডাকে ব্যস্ত থাকার এ সময়ে চলছে নীরবতা। ঘাটগুলোতে নেই পণ্যবোঝাই কোনও বোট। ট্রাকগুলো পার্কিং করা রয়েছে টার্মিনালে। কাজ না থাকায় ক্ষোভ শ্রমিকের কণ্ঠে।
ট্যুরিস্ট বোটচালক সাদ্দাম মিয়া বলেন, ‘গেল দশ দিন ধরে কোনো পর্যটক আসেনি। তাই তাদের বোটও ভাড়া হয়নি। আয় না থাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। ধার দেনা করে কোনো রকমে দিন কাটাতে হচ্ছে। কবে আবার পর্যটক আসবে তাও নিশ্চিত নয়। অনিশ্চয়তায় কাটছে দিন।’
মৌসুমি ফল অবতরণ ঘাটের শ্রমিক জালাল হোসেন বলেন, ‘এখন আমাদের কাজ করার কথা, অথচ আন্দোলনের কারণে কোনো বোট আসেনি, তাই আমাদের কাজও নেই। আমরা দিনে কামাই করে দিনে খাই। এখন আমাদের কষ্টের শেষ নেই। আমাদের কথা কেউ ভাবে না। সবার চোখেই আমরা আবর্জনা। আমাদের নিয়ে কারো ভাবার সময় নেই। শুধু আমরাই নই, এই টার্মিনালের অনেক চালক-হেলপারও বেকার হয়ে গেছে। মাল আসে না, তাই গাড়ি ভাড়াও হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কাজ না করলে পেট চলেনা। আমরা এমন পরিস্থিতি চাই না। আপনারা দয়া করে আমাদের কথা একটু ভাবেন।’
বর্ষা মৌসুমে পর্যটক আসার শুরুর সময়ে এমন অনিশ্চয়তায় বুকিং বাতিলসহ প্রতিদিনই লোকসান গুণতে হচ্ছে বলে জানান পর্যটন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
হোটেল স্কয়ার পার্কের মালিক নিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ও প্রকৃতির রূপ দেখতে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে রাঙ্গামাটিতে। সবেমাত্র পর্যটক আসতে শুরু করেছিল, সেই সময় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় অনেক বুকিং বাতিল হয়ে গেছে, টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। মোট কথা, যেখানে দৈনিক লাখখানেক টাকা আয় হবার কথা, সেখানে এখন লাভ তো দূরের কথা; প্রতিদিন হাজার ত্রিশেক টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে।’
রাঙ্গামাটি হাউজ বোট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘রাঙ্গামাটির প্রতিটি হাউজ বোটের কম করে হলেও পাঁচ থেকে সাতটি করে বুকিং বাতিল হয়েছে, টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা। যা সারা বছর ব্যবসা করেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।’
রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ দাবি করেন, দেশে কোটা অন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে জেলায় পর্যটন, কৃষি খাতে শতকোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয় ব্যবসায়ীদের পক্ষে।
চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের তথ্যমতে, রাঙ্গামাটিতে লক্ষাধিক মানুষ পর্যটন ও কৃষি খাতের ওপর নির্ভরশীল।