অসুস্থ ছেলের খবর নিতে এসে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম লংতিয়ান পাড়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। মৃত দম্পতি হলেন ব্যাটলিং মৌজার তাংনাং গ্রামের বাহন কুমার ত্রিপুরা (৫৫) ও তাঁর স্ত্রী মেলাতি ত্রিপুরা (৫৩)।
কিছুদিন আগে একই গ্রামে ১১ ঘণ্টার ব্যবধানে ডায়রিয়ায় আরও দুজন মারা যান। ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছড়িয়ে পড়ায় সে সময় আট দিন ধরে বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওষুধসহ তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী লংতিয়ান পাড়ায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা দেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, লংতিয়ান পাড়ার পেচাং ত্রিপুরা (৩৫) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। তাংনাং গ্রাম থেকে তাঁকে দেখতে আসেন তাঁর বাবা ও মা। গতকাল শুক্রবার হঠাৎ তাঁরা দুজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। পরে রাত ১১টায় মেলাতি ত্রিপুরা মারা যান। এক ঘণ্টার পর বাহন কুমার ত্রিপুরাও মারা যান।
এর আগে ৬ জুন একই গ্রামে রাত তিনটার দিকে গুমোতি বালা ত্রিপুরা ও পর দিন বেলা দুটার দিকে সিংহ ত্রিপুরা নামের দুজন মারা যান। এ সময় অর্ধশতাধিক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
৭ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে লংতিয়ান পাড়ায় স্বাস্থ্য কর্মী হরিনজয় ত্রিপুরা ওষুধসহ পৌঁছান। পরদিন হেলিকপ্টারে করে আরও দুজন স্বাস্থ্য কর্মীকে লংতিয়ান পাড়ায় পাঠানো হয়। পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরাও (বিজিবি) চিকিৎসা সহায়তা দেন। টানা আট দিন চিকিৎসা দেওয়ার পর গত বুধবার ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে এলে স্বাস্থ্যকর্মীরা ফিরে আসেন। তবে সাত-আটজন তখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি। এর মধ্যে পেচাং ত্রিপুরাও দুর্বল ছিলেন বলে জানান স্বাস্থ্যকর্মী নলিনী ত্রিপুরা।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বনবিহারী চাকমা বলেন, ‘আজ ভোরে লংতিয়ানপাড়া কারবারি আমাকে মুঠোফোন দুজনের মৃত্যুর খবর জানান। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁরা অন্য গ্রাম থেকে এসেছেন। রাতে ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়ার পর দুর্বল হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়।’
বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অরবিন্দ চাকমা বলেন, ‘কিছুদিন আগে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আসার পর আমাদের স্বাস্থ্য কর্মীরা ফিরে এসেছেন। আজ শুনছি আবার নাকি দুজন মারা গেছেন। তবে এখানে যারা ডায়রিয়া আক্রান্ত তাঁরা ঠিক আছেন।
অন্য গ্রাম থেকে আসা ব্যক্তিরা মারা যান। আমরা সেখানকার পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছি। নতুন রোগী পাওয়া গেলে আবার চিকিৎসা দেওয়া হবে।’