মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হচ্ছে। টানা ১০ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল মঙ্গলবার রাতে আবারও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। গতকাল রাত সাড়ে ৯টা থেকে দিবাগত রাত একটা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাতে রাখাইনের ‘নারিকেলবাগিচা’ এলাকা থেকে গোলাগুলির শব্দ ভেসে এসেছে। ওই এলাকায় আরাকান আর্মির দখলে থাকা দুটি সীমান্তচৌকি রয়েছে। আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দুটি সশস্ত্র দল আরসা ও আরএসওর এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে বলে তাঁদের ধারণা।
নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শফি ও স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল আজিজ বলেন, দিবাগত রাত একটা পর্যন্ত তাঁরা গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন। এ সময় শতাধিক গুলির শব্দ ভেসে এসেছে। নতুন করে ওপারে গোলাগুলির ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য নুর মোহাম্মদ আজ বুধবার সকালে বলেন, দীর্ঘ বিরতির পর ১০ আগস্ট সীমান্তের ওপারে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়েছে। এর পর থেকে এপারের লোকজন গোলাগুলির শব্দ আর শোনেননি। হঠাৎ গতকাল রাতে আবারও গোলাগুলির বিকট শব্দ শোনা গেছে। এতে নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের নির্ঘুম রাত কেটেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাওয়ার ভিডিও গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, টানা ১১ মাসের সংঘাতে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীকে হটিয়ে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের ২৭১ কিলোমিটার এলাকা দখলে নেয় আরাকান আর্মি। সেখানকার কয়েকটি সীমান্তচৌকিতে পাহারা বসায় সশস্ত্র দলটি। এর পর থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তবর্তী রাখাইনের বিভিন্ন এলাকায় গোলাগুলি ও সংঘাতের ঘটনা জানা যায়নি। তবে ১০ আগস্ট হঠাৎ আরাকান আর্মির দুটি চেকপোস্টে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন মিয়ানমার থেকে এক ব্যক্তি একটি একে–৪৭ রাইফেল, ৫২টি গুলি ও দুটি ম্যাগাজিন নিয়ে বাংলাদেশের উখিয়ায় পালিয়ে এসে বিজিবি সদস্যদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁর নাম জীবন তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি বিজিবির হেফাজতে রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হলেও আরাকান আর্মির একজন সদস্য বলে জানিয়েছেন। ১৭ আগস্ট দুপুরে বিজিবি সদস্যরা তুমব্রু সীমান্ত থেকে আরাকান আর্মির সহযোগীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসরুল হক বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অনুপ্রবেশে সহায়তার অভিযোগে সম্প্রতি বিজিবি পাঁচজনকে আটকের পর পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। তাঁদের মধ্যে তিনজন মিয়ানমারের নাগরিক ও দুজন বাংলাদেশি। সবাই এখন বান্দরবানের কারাগারে।
জানতে চাইলে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম খায়রুল আলম বলেন, ‘ওপারের পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে টহল তৎপরতা জোরদার আছে।’