রমজানে দুর্দশা ঘোচাতে এত উদ্যোগ, তবু শঙ্কা

0
110
চট্টগ্রাম বন্দর

রমজান এলেই হুহু করে বাড়ে নিত্যপণ্যের দাম। দেখা দেয় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংকট। যানজটের ভোগান্তি বাড়ে বহু গুণ। অন্য বছরের মতো এবারও রমজানকেন্দ্রিক এসব দুর্দশা কমাতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন সেবা সংস্থার তরফ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এমন উদ্যোগ নেওয়া হয় বছর বছর। তবু রোজার মাসে খুব একটা কমে না নগরবাসীর দুর্ভোগ। ফলে এবারও প্রশাসনের উদ্যোগ বাস্তবে কতটা কাজে লাগবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে নগরবাসী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজানে দুর্ভোগ কমাতে হলে যেসব এলাকায় পানি সংকট রয়েছে, সেখানে পানি সরবরাহ করতে হবে। যেখানে বিদ্যুতের সরবরাহ লাইনে ত্রুটি আছে, তা আগেভাগে সারিয়ে তুলতে হবে। কোনো কারণে গ্যাস সরবরাহ করা না গেলে আগেই মাইকিং করে জানিয়ে দিতে হবে। নিত্যপণ্যের দর নিয়ন্ত্রণে বাজার তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয়, সেজন্য মাঠ পর্যায়ে বাড়াতে হবে পুলিশের নজরদারি।

এ ব্যাপারে নাগরিক দুর্ভোগ নিয়ে কাজ করা নাগরিক উদ্যোগ চট্টগ্রামের প্রধান উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘প্রতিবছর রোজা এলেই সেবা সংস্থার পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে বাস্তবে সেসব উদ্যোগ খুব একটা কাজে আসে না। তাই এবার আমরা বিভিন্ন সেবা সংস্থার কর্ণধারদের সঙ্গে বৈঠক করছি, যাতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যায়। আমাদের তরফ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতার কথা বলছি।’ তিনি বলেন, ‘ওয়াসা পর্যাপ্ত পানি উৎপাদন করছে। এর পরও অনেক এলাকায় পানি নেই। তাই যেসব এলাকায় পানি থাকে না, রমজানে সেসব এলাকায় নিয়মিত পানি সরবরাহ করতে হবে।

বিদ্যুতের সংকট না থাকলেও সরবরাহ লাইনের কারণে অনেক এলাকায় বিভ্রাট হচ্ছে। সেসব ত্রুটি সারানো দরকার। কোনো এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করা না গেলে কর্তৃপক্ষের উচিত আগেভাগেই জানানো।’

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘রমজান ঘনিয়ে এলেই একশ্রেণির অতিলোভী ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও লোভী ব্যবসায়ীদের কারণে তা পারা যাচ্ছে না। চাল, ডাল, চিনি, সয়াবিন– সব ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট। রমজানে মানুষ যাতে সিয়াম সাধনা করতে পারে, সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে।’

কথা ও কাজে কি মিল থাকবে ওয়াসার: উৎপাদন বাড়ায় নগরে পানি সংকট অনেকটাই কমে এসেছে। তবু অনেক স্থানে দেখা দেয় পানি সংকট। রমজানে তা আরও বাড়ে। এবারও তা-ই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এবার ওয়াসার তরফ থেকে পানির সংকট থাকবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা আদৌ রক্ষা হবে কিনা এ নিয়ে নগরবাসী রয়েছে সংশয়ে।

রমজান সামনে রেখে নাগরিক সেবা নিশ্চিতের দাবিতে কাজ করা নাগরিক উদ্যোগের তরফ থেকে সংগঠনটির একটি প্রতিনিধি দল ১২ মার্চে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) সঙ্গে দেখা করে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পানি সংকট ও লবণাক্ত পানি সরবরাহের অভিযোগ করেন।

ওয়াসার এমডি ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘নগরীতে এখন আর পানি সংকট নেই। কারণ আমাদের পানির উৎপাদন বেড়েছে। সংযোগ লাইনও সসম্প্রসারণ করা হয়েছে। আমরা লাইন সংস্কার করেছি। ফলে রমজানে নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহের বিষয়ে আমরা নগরবাসীকে আশ্বস্ত করতে পারি।’

মার্কেটকেন্দ্রিক যানজট ভোগাবে: রমজানে নানা কারণে যানজট বাড়ে। সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। ঈদের আগে এই দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তাই যানজট নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের তরফ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নামানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে নগর পুলিশ।

সিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) মোহাম্মদ কাজী হুমায়ুন রশীদ বলেন, রমজানে যানজটে যাতে মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে না হয় সেজন্য বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী নেতাদের কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কখনও গ্যাস থাকে না, কখনও মিটমিট করে জ্বলে: আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ করা হয় চট্টগ্রামে। ফলে আমদানিতে ছেদ পড়লেই গ্যাসের কষ্ট শুরু হয়। প্রায় সময় গ্যাস সংকটে নাকাল হন নগরবাসী। অনেক সময় গ্যাসের চাপ কমে গেলেও মিটমিট জ্বলে চুলা। তাতে রান্না করা যায় না। রমজান ঘনিয়ে আসায় সেই শঙ্কা আরও বেড়েছে। চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট। বিপরীতে মিলছে ২৯০ মিলিয়নের মতো। ঘাটতি থাকছে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট। দুটি সার কারখানার মধ্যে কাফকোতে ৪২, সিইউএফএলে ৪১ ও শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৩৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া আছে কলকারখানায়। এগুলোর চাহিদা পুরোপুরি মেটাতে গিয়ে গ্যাসের ঘাটতিতে পড়তে হচ্ছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণও চ্যালেঞ্জ: এবারও রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এজন্য নগর ও উপজেলা মিলিয়ে ৪০টি বাজার তদারক দল গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও বাজার কমিটির প্রতিনিধিদের এসব দলে রাখা হয়েছে। এর বাইরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়মিত অভিযান তো রয়েছেই। এর পরও রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণকেই কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তারা।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর তদারকির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে পণ্যের গুণগত মান, সরবরাহ, ভেজালের বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করা হবে। দ্রব্যমূল্য বাড়ানো, মজুত করা কালোবাজারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তৌফিকুল ইসলাম বাবর, চট্টগ্রাম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.