রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে

0
84

চলতি অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রাকে কিছুটা উচ্চাভিলাষী মনে করেন রপ্তানিককারক, উদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে। কারণ রপ্তানি খাতে পুরোনো চ্যালেঞ্জের সঙ্গে নতুন অনেক চ্যালেঞ্জও যুক্ত হয়েছে। ব্যাংক ঋণে সুদের হার বেড়েছে। আগামী ডিসেম্বরে নতুন বেতন কাঠামোয় শ্রমিকদের মজুরি দিতে হবে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাসের দাম বেড়েছে। প্রতি মাসেই বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। এরপরও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। এ কারণগুলো রপ্তানি সক্ষমতায় প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। অন্যদিকে রপ্তানি বাজারে চাহিদা কমছে। এ বাস্তবতায় রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এ ছাড়া তারা খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন।

তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান  বলেন, রপ্তানি খাতে পুরোনো চ্যালেঞ্জের সঙ্গে নতুন অনেক চ্যালেঞ্জও যুক্ত হয়েছে। ব্যাংক ঋণে সুদের হার বেড়েছে। আগামী ডিসেম্বর থেকে নতুন ওয়েজ বোর্ডে শ্রমিকদের মজুরি দিতে হবে। কাস্টমস, ভ্যাট এসব নিয়ে হয়রানি আছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাসের দাম বেড়েছে। বিদ্যুতের দাম মাসে বাড়ছে। এরপরও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। এ রকম কারণগুলো রপ্তানি সক্ষমতায় প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। অন্যদিকে রপ্তানি বাজারে চাহিদা কম। প্রধান রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান বাজার জার্মানিতে রপ্তানি কমেছে। সার্বিক এসব চ্যালেঞ্জ সরকারের পক্ষ থেকে যদি আমলে নেওয়া না হয়, তাহলে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ নিশ্চিত না হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। বরং গত অর্থবছরের চেয়ে আরও কমে যেতে পারে রপ্তানি। কারণ রপ্তানি প্রবণতা এখন ভালো নয়। প্রথম ছয় মাসে ভালো আয়ের ফলে গত অর্থবছরে গড়ে রপ্তানি বেশি হয়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের চেয়ে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেশি হয়েছে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও তা কিছুটা বেশি। রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৭ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে নিট ক্যাটাগরির লক্ষ্যমাত্রা ২৮ দশমিক ৩০ বিলিয়ন। ওভেন ক্যাটাগরিতে ২৩ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছর সব মিলিয়ে মোট ৬২ বিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যমাত্রা গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলার বেশি। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি হয়েছে ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৪ শতাংশ কম হয়েছে রপ্তানি। অবশ্য রপ্তানি আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।

 

গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান  বলেন, চলতি অর্থবছরে যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় স্পষ্টতই তা উচ্চাভিলাষী। কোনো রকম গবেষণা ও বিশ্লেষণ ছাড়া বরাবরের মতো এবারও রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের এ পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত নয়। তিনি বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। আবার রপ্তানি বাজার পরিস্থিতিও বিশেষ ভালো নয়। নির্বাচনের বছর হিসেবে এবার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও একটা বড় বিষয়। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে এগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। আবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও বিশেষ কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও কাউকে কোনো রকম জবাবদিহির মুখে পড়তে হয় না। এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, ঝুঁকি থেকে রপ্তানি খাতের সুরক্ষায় পণ্যে বৈচিত্র্য আনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হচ্ছে বহুদিন ধরে। তা কার্যকর করতে লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে খাতভিত্তিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। যেমন– চামড়া ও চামড়া পণ্যের কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য। কোরবানির সময় পশুর চামড়া বিক্রি হয় না, পচে বিনষ্ট হয়। অথচ পণ্য তৈরিতে চামড়া আমদানি করতে হয়। এগুলো নিয়ে যেন কারও মাথাব্যথা নেই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.