রপ্তানি বাণিজ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এখন পর্যন্ত খুবই সীমিত। রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান পেছনের সারিতে। বিশেষ করে বস্ত্র ও পোশাকে এ অবস্থান বেশি খারাপ। এ ধরনের সরবরাহ চেইনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে ২০ শতাংশীয় পয়েন্ট কম। সরবরাহ চেইনে দেশের বেশিরভাগ শিল্পের অংশগ্রহণ কমছে। অবশ্য আগের বছরগুলোর তুলনায় গত ২০২০-২১ অর্থবছরে অবস্থার কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে।
‘বাণিজ্য এবং বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক এক প্রতিবদেনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ইনস্টিটিউট (আইডিবিআই)। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে বাংলাদেশের জন্য রপ্তানি বাণিজ্যে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার বাস্তবতায় বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
গতকাল রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে প্রতিবেদনটি প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. কাউসার আহমেদ, এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং, আইডিবিআইর পরিচালক আরেফ সুলেমান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার প্রমুখ।
সরবরাহ চেইনে দুর্বলতা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য তৈরি পোশাকনির্ভর। আবার তৈরি পোশাক উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। প্রচলিত বাজার নির্ভরতার সমালোচনাও করা হয় এতে। প্রতিবেদনে বলা হয়, তৈরি পোশাকের পশ্চাৎ সংযোগ শিল্পে আরও সমন্বয় এবং শক্তিশালী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। পণ্যের বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি বাজারেও বৈচিত্র্য আনার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ আলবার্ট এফ পার্ক এবং অর্থনীতিবিদ পারমিলা এ শ্রীভেলি। প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র দেশের দুর্নাম থেকে পাঁচ দশকে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ধারাবাহিক। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার সিঙ্গাপুর এবং ডেনমার্কের চেয়েও বড়। মাথাপিছু আয়ের হিসাবে প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে। বাংলাদেশের এ রূপান্তরের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে রপ্তানি বাণিজ্যে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে সফল অনুপ্রবেশ। এর ফলে বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় প্রধান।
আলোচনায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ সহায়ক হতে পারে বলে এর মাধ্যমে পুঁজির পাশাপাশি প্রযুক্তিও দেশে আসে। এতে স্থানীয় উদ্যোক্তারা উপকৃত হতে পারেন।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে কম। এখানে উন্নতি করতে হবে। কিছু জায়গায় শুল্ক অনেক বেশি। তা নিয়েও আলোচনা হওয়া উচিত। রাজস্ব আদায় বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কারের কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত দিলেই যে সরকার তা মেনে নেবে, ব্যাপারটা এমন নয়। অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য যেটুকু প্রয়োজন, যাচাই-বাছাই করে সেটুকু নেওয়া হচ্ছে। তারা উন্নয়ন সহযোগী। সরকার তাদের সঙ্গে কাজ করছে।