যৌনমিলনে নারীর অসম্মতি বিবাহবিচ্ছেদের কারণ হতে পারে না: ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত

0
5
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকারবিষয়ক সর্বোচ্চ আদালত (ইসিএইচআর)। ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গ শহরেফাইল ছবি: রয়টার্স

স্বামীর সঙ্গে যৌনমিলনে অসম্মতিকে ‘দোষ’ হিসেবে গণ্য করে এক নারীর বিপক্ষে রায় দিয়েছিলেন ফ্রান্সের একটি আদালত। আদালত ওই নারীর স্বামীকে বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষমতা দিয়েছিলেন। ফরাসি আদালতের এই রায়ের সমালোচনা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকারবিষয়ক সর্বোচ্চ আদালত (ইসিএইচআর) বৃহস্পতিবার বলেছেন, যৌনমিলনে অসম্মতি জানানোর কারণে ওই নারীকে দোষী বলা যাবে না।

ফ্রান্সের যে নারী যৌনমিলনে অসম্মতি জানিয়েছেন, তাঁর বয়স ৬৯ বছর। মামলার রায়ে যৌনমিলন বন্ধ রাখার কারণে ওই নারীকে ‘একমাত্র দোষী’ উল্লেখ করে তাঁর স্বামীকে বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

ফ্রান্সের এই মামলাটি শেষ পর্যন্ত ইসিএইচআরে গড়ায়। গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতের বিচারকেরা সর্বসম্মতিক্রমে এক রুল জারি করেন। এতে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের স্থানীয় আদালতের এই রায়ের মাধ্যমে মানবাধিকারসংক্রান্ত ইউরোপীয় কনভেনশনের অংশ হিসেবে নারীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।

ফ্রান্সের স্থানীয় আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দেওয়া ইসিএইচআরের রুলে আরও বলা হয়েছে, যে নারী স্বামীর সঙ্গে যৌনমিলনে অসম্মতি জানিয়েছেন, বিবাহবিচ্ছেদের জন্য সেটাকেই ‘দোষ’ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না।

আদালতে ওই নারীর পরিচয় হিসেবে ‘এইচডব্লিউ’ উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি প্যারিসের পশ্চিম শহরতলি লে চেসনেতে বসবাস করেন। এই নারী বিবাহবিচ্ছেদের বিরোধিতা করেননি; কারণ, তিনিও তা চেয়েছিলেন। তবে ফ্রান্সের স্থানীয় আদালত যে কারণের ভিত্তিতে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার রায় দিয়েছেন, তিনি সেটার বিরুদ্ধে ইসিএইচআরে অভিযোগ করেছেন।

ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গ শহরে অবস্থিত ইসিএইচআর বলেছেন, বৈবাহিক সম্পর্কের যেকোনো ধারণার ক্ষেত্রে ‘সম্মতিকে’ যৌনসম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

আদালতে ওই নারীর স্বামীর নাম হিসেবে ‘জেসি’ উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৮৪ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁদের চার সন্তান রয়েছে। চার সন্তানের মধ্যে এক মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী, যাঁকে সহায়তা করার জন্য সব সময় মা-বাবার একজনকে দরকার হয়। তাঁর মা এই দায়িত্ব নিয়েছেন।

প্রথম সন্তানের জন্মের পর এই দম্পতির সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। ১৯৯২ সাল থেকে ওই নারীর শারীরিক সমস্যা শুরু হয়।

আদালত বলেছেন, ২০০২ সালে স্বামী ওই নারীকে শারীরিক ও মৌখিকভাবে নিপীড়ন শুরু করে। ২০০৪ সালে ওই নারী যৌনমিলন বন্ধ করে দেন এবং ২০১২ সালে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য তিনি আদালতে আবেদন করেন।
২০১৯ সালে ফ্রান্সের ভার্সাইয়ের একটি আদালত এই নারীর আবেদন বাতিল করে দেন এবং তাঁর স্বামীর পক্ষে রায় দেন। অন্যদিকে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই ফ্রান্সের সর্বোচ্চ আদালত (ক্যাসেশন কোর্ট ) ওই নারীর আপিলের চেষ্টা নাকচ করে দেন।

২০২১ সালে ওই নারী  মামলাটি নিয়ে ইসিএইচআরে যান।

এই মামলায় ওই নারীকে ফ্রান্সের নারী অধিকারবিষয়ক দুটি সংগঠন সহযোগিতা করেছে। সংগঠন দুটি হলো উইমেনস ফাউন্ডেশন ও ফেমিনিস্ট কালেকটিভ অ্যাগেইনস্ট রেপ।

২০২১ সালে মামলাটি ইসিএইচআরে যাওয়ার পর এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠন দুটি বলেছিল, বিবাহ যৌনদাসত্ব নয় এবং কোনোভাবেই তা হওয়াও উচিত নয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছিল, ফরাসি বিচারকেরা তাঁদের রায়ে ‘বিবাহসংক্রান্ত সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গি’ আরোপ করেছেন। ফরাসি আইনে ‘বৈবাহিক কর্তব্য’ হিসেবে দম্পতিদের যৌনমিলন করতে হবে—এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

দ্য গার্ডিয়ান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.