ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ততক্ষণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি ফ্লাইট ৩৭১ আকাশে উঠে গেছে। গন্তব্য ‘ফেলুদার যত কাণ্ড’ কাঠমান্ডুতে। ১০০ মিনিটের বিমানভ্রমণ শেষে বিমান কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে গন্তব্য হোটেলে। নতুন শহরে ট্যাক্সি কীভাবে খোঁজ পাব, তা চিন্তার সময় বিনা মূল্যের ওয়াই–ফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মুঠোফোনে পাঠাও অ্যাপের নোটিফিকেশন চলে আসে। নেপালে ২০১৮ সাল থেকে কাজ করছে বাংলাদেশের রাইডশেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও। সেই পাঠাও অ্যাপে ভরসা করে কল দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে সঞ্জয় সঞ্জু নামের এক চালক আমার অর্ডার রিসিভ করে চলে আসেন বিমানবন্দরের পার্কিংয়ে।
বাংলাদেশি রাইড-শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে নেপালে বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছে। আমাদের পাঠাও রাইডার সঞ্জয়কে বিভিন্ন প্রশ্ন করি। চালকের নেপালি ভাষা ছাড়া কোনো ভাষা জানা নেই। সামান্য হিন্দি আর ইংরেজি ভাষা পুঁজি করে চলে আলাপ। সঞ্জয় জানান, কাঠমান্ডুর ব্যস্ত সড়ক থেকে শুরু করে পর্যটনকেন্দ্র নাগরকোট পর্যন্ত পাঠাও সেবা পাওয়া যায়। নেপালে আগত পর্যটকদের কাছেও পাঠাও একটি নির্ভরযোগ্য নাম। স্থানীয় লোকজন নিজেদের জন্য বিভিন্ন বাইক ও ছোট ছোট ট্যাক্সি ব্যবহার করে। পাঠাও অ্যাপ পর্যটক বা কাঠমান্ডু শহরে যাঁরা নতুন, তাঁদের যাতায়াত সহজ ও সাশ্রয়ী করেছে।
কাঠমান্ডুর রাস্তায় পাঠাওয়ের মোটরবাইক ও ট্যাক্সি দেখা যায়। পাঠাও অ্যাপ ব্যবহার করে নেপালিরা এখন খুব সহজেই চলাচল করতে পারছেন। সঞ্জয় সঞ্জু বলেন, ‘আমি কয়েক মাস ধরে পাঠাওয়ের মাধ্যমে ট্যাক্সি চালাই। প্রতিদিন ১০০০-১৫০০ নেপালি রুপি আয় করি। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় পর্যটকেরা পাঠাও অ্যাপের নিয়মিত ব্যবহারকারী। নিয়মিত বিমানবন্দর থেকে পর্যটকদের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাই। বাইক ও কার সুবিধার পাশাপাশি কাঠমান্ডুতে ফুড ডেলিভারি ও পার্সেল সার্ভিসও চালু আছে।
নেপালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন লাখো পর্যটক। বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন জায়গায় ট্যাক্সি বা গাড়ি ভাড়া করা বিদেশি পর্যটকদের জন্য বেশ হ্যাপা। সেই সমস্যা দূর করছে বাংলাদেশি অ্যাপ পাঠাও। কাঠমান্ডু থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নাগরকোট শহরে আমরা কথা বলি পূর্ণ লামা নামের এক চালকের সঙ্গে। তিনি সেখানকার কাবরে নামের এলাকায় থাকেন।

পূর্ণ লামা বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে পাঠাওয়ের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করছি। অনেকেই নিয়মিত পাঠাও ব্যবহার করে পর্যটকদের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। বিদেশি পর্যটকেরা রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করেন। সেই কারণে পাঠাও অ্যাপের ব্যবহার দেখা যায়। এর মাধ্যমে পর্যটকেরা কেবল একটি নির্দিষ্ট স্থানে ভ্রমণের জন্য গাড়ি ভাড়া করছেন না; বরং নেপালের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থান ঘুরে দেখার জন্যও পাঠাও তাদের সহায়তা করছে।
নেপালে স্বল্প দূরত্বে ভ্রমণের জন্য পর্যটকেরা বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করছেন। ইনড্রাইভ, জুমজুম, সাজিলোসহ বিভিন্ন অ্যাপের সঙ্গে বাংলাদেশি অ্যাপ পাঠাও বেশ ভালোভাবেই প্রতিযোগিতা করছে।
বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ নেপালে সামাজিক সমস্যার সমাধান ও কর্মসংস্থান তৈরির জন্য কাজ করছে। এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘যখন বাংলাদেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠান ক্রসবর্ডার অপারেশন করতে চায়, অন্য দেশে বাংলাদেশের স্টার্টআপের লোগো দেখতে পাই, তখন বেশ ভালো লাগে। এটা উৎসাহব্যঞ্জক। আমার পরামর্শ থাকবে, বিভিন্ন স্টার্টআপ ও কোম্পানিগুলো অন্য দেশে কাজ করার সময় সেখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে নেবে। সেখানকার সমাজে স্টার্টআপগুলো যেন বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর যেসব স্টার্টআপ অন্য দেশ ও অঞ্চলে কাজ করতে চায়; আশা করি, তারা নিজেদের ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা রাখবে। ব্যবস্থাপনায় আরও মেধাবী কর্মী যুক্ত করে এগিয়ে যাবে।’
পাঠাওয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাঠাওকে নেপালের মতো বাজারে সফলভাবে কাজ করছে। এটি আমাদের জন্য একদিকে গর্বের, অন্যদিকে এটি বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের সক্ষমতার একটি প্রমাণ। শুরুতে আমরা দেশের সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দিয়েছিলাম। শুরু থেকেই আমাদের স্বপ্ন ছিল এমন মাধ্যম তৈরি করা, যা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রভাব তৈরি করবে। নেপালে আমাদের যাত্রা সেই স্বপ্নেরই বাস্তব রূপ। এখন যখন দেখি কাঠমান্ডুর রাস্তায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পর্যটকেরাও পাঠাও ব্যবহার করছেন, তখন সেটি আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় করছে। বাংলাদেশের উদ্ভাবন বৈশ্বিক পর্যায়ে জায়গা করে নিতে পারে, এটাই তার প্রমাণ। পর্যটননির্ভর দেশ নেপালের দৈনন্দিন চলাচলের জন্য বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করছে, এমন কথা আমাদের জন্য অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক।
জাহিদ হোসাইন খান
নেপাল থেকে ফিরে