যেতে চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে, লাশ মিলল সেপটিক ট্যাঙ্কে

0
142
গ্রেপ্তার তারেক আহাম্মেদ ও তার সহযোগী মোহাম্মদ হৃদয় আলী। ছবি: ডিএমপি

লেখাপড়া শেষ করে ঢাকার আশকোনোয় বড় বোনের বাসায় থাকতেন নোয়াখালীর আমির হোসেন। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। এর মধ্যে ফেসবুকে পরিচয় হয় তারেক আহাম্মেদের সঙ্গে। মাঝেমধ্যে কথা হতো তাদের। প্রায় পাঁচ মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার তথ্য দেওয়ার কথা বলে তাকে গাজীপুরে ডেকে নেয় তারেক। পরে মুক্তিপণ না পেয়ে আমিরকে হত্যা করে তাবলিগ জামাতে আত্মগোপনে থাকেন তিনি। পুলিশের নিবিড় নজরদারি শেষে তারেককে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। বুধবার গাজীপুরের মাওনা এলাকা থেকে আমিরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ বিষয়ে জানাতে বৃহস্পতিবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন ডাকে পুলিশ। এতে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, আসামি তারেকের ‘কষ্টের জীবন’ নামে একটি ফেসবুক আইডি ছিল। তিনি ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সমকামিতার প্রস্তাব দিত। যারা তার প্রস্তাবে সাড়া দিত, তাদের গাজীপুর, চৌরাস্তা, শ্রীপুর ও মাওনা এলাকায় ডেকে নিয়ে কৌশলে মোবাইলসহ টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়ে ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিত। আমিরকেও তার বোনের বাসা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তায় ডেকে নিয়ে আসামিরা আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করে। প্রত্যাশিত মুক্তিপণ না পাওয়ায় তাকে হত্যা করে লাশ বস্তায় ভরে বাসার পেছনে পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দিয়ে তাবলিগ জামাতে আত্মগোপন করে তারা।

নিহতের বড় বোন তাজনাহার বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সব প্রস্তুত করলাম ভাইকে দেশের বাইরে পাঠাব বলে। আর ওরা আমার ভাইকে মেরে ফেলল! আমার সহজ-সরল ভাইকে যারা মেরে ফেলেছে, তাদের ফাঁসি চাই।’

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আবু তাহের-আয়েশা বেগম দম্পতির সন্তান আমির চাকরি না করে বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকার আশকোনা এলাকা থেকে নিখোঁজ হন আমির। দীর্ঘদিন পরও তাকে খুঁজে না পেয়ে গত ১৩ এপ্রিল তার ভাই বিল্লাল হোসেন দক্ষিণখান থানায় অপহরণ মামলা করেন।

ওই ঘটনায় বিভিন্ন সময় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু লাশের কোনো খোঁজ দিতে পারেনি তারা। পরে বুধবার সকালে নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে মূলহোতা তারেক ও লাশ গুমে সহযোগী মোহাম্মদ হৃদয় আলীকে গ্রেপ্তারের পর মেলে লাশের তথ্য। গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে একটি বাসার সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা অন্যরা হলো– মুক্তিপণের টাকা নিতে দেওয়া বিকাশ নম্বরের মালিক রাসেল সরদার, নিহতের মোবাইল কেনা আশরাফুল ইসলাম ও তৌহিদুল ইসলাম বাবু।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার এসআই রেজিয়া খাতুন বলেন, তারেক ও হৃদয়কে বৃহস্পতিবার আদালতে তুলে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। পরে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এ ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে।

নিহতের বড় ভাই বিল্লাল বলেন, লাশ উদ্ধারের পরের দিন গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্ত শেষ হয়। পরে বিকেলে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.