
যুদ্ধ বন্ধে দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার যে প্রস্তাব রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তুলে ধরেছেন, তাতে সমর্থন দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের আলাপে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। আলাপের বিষয়টি গতকাল শনিবার প্রকাশ্যে আসায় এমনটা জানা যায়।
ট্রাম্প ইউরোপীয় নেতাদের বলেছেন, তিনি মনে করেন, যদি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দিতে সম্মত হন, তাহলে একটি শান্তিচুক্তির বিষয়ে সমঝোতা হতে পারে। ইউরোপের জ্যেষ্ঠ দুই কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস এ তথ্য জানিয়েছে। তিন বছর ধরে চলা লড়াইয়ে দনবাস অঞ্চলটি পুরোপুরি দখল নিতে পারেনি রাশিয়া।
আলাস্কায় অনুষ্ঠিত আলোচনার বিষয়ে সরাসরি অবগত দুটি সূত্র গার্ডিয়ানকে জানিয়েছে, যুদ্ধ বন্ধের শর্ত হিসেবে পুতিন দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত দনবাস থেকে ইউক্রেনকে সরে যাওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বিনিময়ে তিনি যুদ্ধের বাকি সম্মুখভাগে লড়াই বন্ধ রাখার কথা বলেছেন।
যদিও লুহানস্ক প্রায় পুরোপুরি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে ইউক্রেন এখনো দোনেৎস্কের ক্রামাতোর্স্ক ও স্লোভিয়ানস্ক শহরসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশ ধরে রেখেছে এবং সেখানে অত্যন্ত সুরক্ষিত অবস্থান বজায় রেখেছে। এই শহরগুলো রক্ষা করতে গিয়ে হাজারো প্রাণহানি হয়েছে।
পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের বিনিময়ে তিনি দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে অগ্রসর হওয়া বন্ধ করবেন এবং লড়াইয়ের সম্মুখভাগে স্থিতি বজায় রাখবেন। এ দুটি অঞ্চলে রুশ বাহিনী উল্লেখযোগ্য এলাকা দখল করে আছে।
কয়লা, লোহার আকরিকসহ খনিজসমৃদ্ধ ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে ট্রাম্পের সমর্থনের বিষয়টি এমন সময় এসেছে, যখন তিনি যুদ্ধবিরতির পথে না গিয়ে সরাসরি একটি শান্তিচুক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধবিরতি ‘প্রায়ই টেকে না’।
দনবাস অঞ্চলকে রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে কথার বরখেলাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তারা এ ধরনের চুক্তির বিরোধিতা করছে।
ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয় নেতারা আশঙ্কা করছেন, প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি বাদ দিয়ে সরাসরি শান্তিচুক্তিতে গেলে আলোচনায় মস্কো বাড়তি সুবিধা পাবে। আগামীকাল সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে জেলেনস্কির। কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, ইউক্রেনীয় নেতার সঙ্গে হোয়াইট হাউসে যোগ দিতে ইউরোপীয়দেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ট্রাম্প শনিবার তাঁর পোস্টে দাবি করেছেন, সরাসরি একটি শান্তিচুক্তির সমঝোতার দিকে যাওয়াটা ভালো হবে বলে ‘সবার মত নিয়ে ঠিক করা হয়েছে’। যদিও ইউরোপীয় নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, এটি তাঁদের মত নয়।
ইউরোপীয় নেতাদের একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউরোপের সহায়তায় একটি ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনে তাঁরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। তবে নিজের ভূখণ্ড নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ইউক্রেনের ওপর নির্ভর করবে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত শক্তি প্রয়োগ করে পরিবর্তন করা যাবে না।

ট্রাম্প ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপের পর জেলেনস্কিও একটি বিবৃতি দিয়েছেন। শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ওই বিবৃতিতে তিনি টেকসই শান্তি অর্জনসহ বেশ কয়েকটি শর্ত দেন। জেলেনস্কি বলেন, প্রথমে যুদ্ধবিরতি ছাড়া সরাসরি শান্তিচুক্তিতে গেলে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর দপ্তরের এক বিবৃতি বলা হয়েছে, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক সামনে রেখে আজ রোববার ভিডিও কলে জেলেনস্কির সঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর মের্ৎস ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের আলাপ হওয়ার কথা রয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ান