
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে নতুন করে শান্তি আলোচনায় বসতে চায় ইউক্রেন। এ লক্ষ্যে মস্কোকে একটি প্রস্তাবও পাঠিয়েছে কিয়েভ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজেই এ খবর জানিয়েছেন। অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শান্তি আলোচনার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। তবে তাঁর অগ্রাধিকার—ইউক্রেনে নিজেদের লক্ষ্য পূরণ।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে দুই পক্ষেরই বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৎপরতায় বিগত পাঁচ মাসে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে দুই দফা আলোচনায় বসেছে মস্কো ও কিয়েভ। এ আলোচনায় বন্দিবিনিময়ের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। তবে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য সবকিছু করতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে চলা থেকে রাশিয়াকে বিরত থাকতে হবে। আগামী সপ্তাহে আবার শান্তি আলোচনায় বসার জন্য মস্কোকে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ইউক্রেনের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তম উমেরভ। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি জেলেনস্কি।
এর আগে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত দুই দফা আলোচনায় ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রুস্তম উমেরভ। গত সপ্তাহে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই দায়িত্ব পাওয়ার ফলে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় আরও তৎপর হওয়ার সুযোগ পাবেন উমেরভ।
ইউক্রেন এমন সময় রাশিয়াকে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব পাঠাল, যখন সম্প্রতি যুদ্ধ থামানোর জন্য ভ্লাদিমির পুতিনকে ৫০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৪ জুলাই তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, এই সময়ের মধ্যে পুতিন যুদ্ধ থামাতে ব্যর্থ হলে মস্কোর ওপর আরও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। বর্তমানে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
রাশিয়ার অগ্রাধিকার লক্ষ্য অর্জন
শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের প্রস্তাবের পর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘ইউক্রেন নিয়ে মীমাংসার বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করার জন্য নিজের আগ্রহের কথা বারবার জানিয়ে এসেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, এতটাও সহজ নয়। আর প্রধান বিষয়টি হলো, আমাদের লক্ষ্য অর্জন। এই লক্ষ্যগুলো পরিষ্কার।’
আজ রোববার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পেসকভের এই বক্তব্য সম্প্রচার করা হয়। ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার হুমকি নিয়ে টেলিভিশনের সাংবাদিক পাভেল জারুবিনকে পেসকভ বলেন, ট্রাম্পের ‘কঠোর’ বক্তব্য শুনতে শুনতে বিশ্ব এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তবে রাশিয়া নিয়ে মন্তব্যের সময় ট্রাম্প এ-ও বলেছেন যে একটি শান্তিচুক্তির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন তিনি।
ইউক্রেনের ২০ শতাংশ ভূখণ্ড বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে দখল করা ক্রিমিয়া উপদ্বীপও। যুদ্ধবিরতির জন্য মস্কোর দাবি, ইউক্রেনের রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলগুলো ফিরে পাওয়ার আশা ত্যাগ করতে হবে কিয়েভকে। একই সঙ্গে পশ্চিমা মিত্রদের দেওয়া সব ধরনের অস্ত্রসহায়তা প্রত্যাখ্যান করতে হবে তাদের। তবে এ দাবি মানতে নারাজ ইউক্রেন।
ইউক্রেনের ১৪২ ড্রোন ধ্বংসের দাবি
যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার প্রচেষ্টার মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। আজ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাজধানী মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবইয়ানিন বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে জানিয়েছেন, গতকাল রাত ও আজ সকালে ইউক্রেনের ১৪২টি ড্রোন ভূপাতিত করেছেন তাঁরা। এর মধ্যে ২৭টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে মস্কো এলাকায়।
রাশিয়ার বেসরকারি উড়োজাহাজ চলাচল নজরদারি করা প্রতিষ্ঠান রোবাভিয়াস্তিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ড্রোন হামলার ফলে মস্কোর চারটি বিমানবন্দর—শেরেমেতইয়েভো, ভনুকোভো, দোমোদেদোভো ও জুকোভস্কিতে সেবা বিঘ্নিত হয়। এই বিমানবন্দরগুলো থেকে ১৩৪টি ফ্লাইট ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আজ মস্কোর সময় সকাল ১০টা পর্যন্ত ভনুকোভো ও গ্রাবৎসেভো বিমানবন্দর বন্ধ ছিল।
এদিকে আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে জেলেনস্কির বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগে ইউক্রেনে ব্যাপক হামলা চালায় রাশিয়া। শনিবার জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন, শুক্রবার রাতভর ইউক্রেনের ১০টি অঞ্চলে হামলা চালানো হয়। আর ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় ৩৪০টির বেশি বিস্ফোরক এবং ৩৫টি ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রুশ বাহিনী।