যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে সর্বোচ্চ ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের

0
14
পোশাকশ্রমিকদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রে ২২২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা দেশীয় মুদ্রায় ২৭ হাজার ৮৪ কোটি টাকার সমান। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। এই বাজারে শীর্ষ দশ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি।

এদিকে অনেক দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনকে টপকে শীর্ষস্থান দখলে করেছে ভিয়েতনাম। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে চীনের চেয়ে ১৮ কোটি ডলারের বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমনটাই উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে ২ হাজার ৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ ৫ দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির চিত্র

যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি এই পরিসংখ্যান মার্চ পর্যন্ত। এপ্রিলের শুরুতেই পরিস্থিতি বদলে যায়। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশের ওপর ২ এপ্রিল ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৫৭ দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক কার্যকরের দিন অনেকটা ‘ইউটার্ন’ করে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করা হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক থাকলেও চীনা পণ্যে মার্কিন শুল্কের হার ১৪৫ শতাংশ। বেইজিং দফায় দফায় পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ শতাংশে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অবশ্য তার আগেই তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনকে পেছনে ফেলেছে ভিয়েতনাম।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ভিয়েতনাম ৩৮৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে চীন রপ্তানি করেছে ৩৬০ কোটির ডলারের তৈরি পোশাক। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।

এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, গত অর্থবছর বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১৭ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই বাজারে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৃতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক হচ্ছে বাংলাদেশ। গত বছর এই বাজারে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা। তার মানে গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ৬১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। চলতি বছর সেই গড় বেড়ে হয়েছে ৭৪ কোটি ডলার।

এদিকে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ভারত ১৫১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তাদের রপ্তানি বেড়েছে ২৪ শতাংশ। আর পঞ্চম শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি করেছে ১২৩ কোটি ডলারে পণ্য। তাদের রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশ।

এ ছাড়া চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মেক্সিকো ৬৪ কোটি ডলার, হন্ডুরাস ৪৮, কম্বোডিয়া ৯৩, পাকিস্তান ৫৫ ও কোরিয়া ৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি সাড়ে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কম্বোডিয়ার রপ্তানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। মেক্সিকো ও কোরিয়ার রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ করে। যদিও হন্ডুরাসের রপ্তানি কমে গেছে ১০ শতাংশ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.