যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের দিন জানা গেল চীন যাচ্ছেন মোদি

0
22
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

শুল্কনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েনের মধ্যেই চীন যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ৩১ আগস্ট চীনের তিয়ানজিন শহরে সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে মোদি যোগ দেবেন।

আজ বুধবার সরকারি সূত্রে যখন মোদির চীন সফরের এ খবর জানা গেল, ঠিক সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে ‘জরিমানা’ হিসেবে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা এল। এতে ভারতীয় পণ্যে শুল্কের মোট পরিমাণ দাঁড়াল ৫০ শতাংশ।

আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকারের তরফ থেকে এই সফরের কথা ঘোষণা করা না হলেও বিভিন্ন সূত্রের খবর, দুই দিনের সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি চীন যাওয়া স্থির করেছেন।

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, মোদি ৩০ আগস্ট এক দিনের জন্য জাপান যাবেন। সেখানে তিনি ইন্দো–জাপান বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। পরের দিন মোদি যাবেন তিয়ানজিন।

মোদি শেষবার চীন সফরে গিয়েছিলেন ২০১৯ সালে। পরের বছর জুনে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে ভারত–চীন সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। ধীরে ধীরে দুই দেশের সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। ২০২৪ সালে রাশিয়ার কাজানে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের এক ফাঁকে মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের। এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে মোদি যোগ দিলে এটাই বোঝা যাবে, দুই দেশের সম্পর্কের শীতলতা ক্রমেই কেটে যাচ্ছে।

সম্পর্কের শীতলতা যে কাটছে তার অন্য প্রমাণও রয়েছে। গত জুনে এসসিও গোষ্ঠীর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। জুলাই মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এবার শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।

শুল্ক ও বাণিজ্যনীতি নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের টানাপোড়েনের আবহে এই সফর এক অন্য মাত্রা পেতে চলেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীন, রাশিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইইউ, ব্রাজিল, জাপান, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সম্পর্কে এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে। দেখা দিয়েছে এক অভূতপূর্ব বাণিজ্য অনিশ্চয়তা। এই পরিস্থিতিতে মোদির চীন সফরের অর্থ শীতলতা কাটিয়ে দুই দেশের আরও কাছাকাছি আসা।

তিয়ানজিনে মোদির সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

এসসিওর সদস্যদেশগুলোর মধ্যে চীন ও ভারত ছাড়াও রয়েছে রাশিয়া, ইরান, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান। রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশসহ মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনে চীনও। সে জন্য চীনকেও চাপে রেখেছেন ট্রাম্প। সাম্প্রতিক অতীতে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটেছে। যদিও ভারত–ইরান সম্পর্ক মধুর। এই ভূরাজনৈতিক আবহে মোদি চীন সফরে গেলে তা যথেষ্ট অর্থবহ ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

তিয়ানজিনে এসসিও শীর্ষ সম্মেলন দুই দিনের। ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর। সেখানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ যোগ দেবেন কি না, এখনো স্পষ্ট নয়। যোগ দিলে পেহেলগামকাণ্ড ও দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের পর মোদি ও শরিফ প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হবেন। সম্মেলনে সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মোদি স্পষ্ট কোনো বার্তা দেন কি না, সেটাও এখন থেকেই আগ্রহের জন্ম দিচ্ছে।

গত জুনে চীনে এসসিও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে রাজনাথ সিং পাকিস্তানের নাম না করে তাদের নিশানা করেছিলেন। বলেছিলেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারত দুমুখো আচরণ বরদাশত করবে না। সেই সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ উপস্থিত ছিলেন।

সীমান্ত বিরোধ সত্ত্বেও চীনের সঙ্গে ভারত সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এগোচ্ছে। সেটা করছে বাণিজ্যিক স্বার্থেই। ট্রাম্পের শুল্কনীতির হুমকির মুখে সেই সম্পর্ক আরও নিবিড় হওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়া–ভারত সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ইউক্রেন যুদ্ধের সময় থেকে রাশিয়া ও চীনও পরস্পরের কাছাকাছি এসেছে। এ পরিস্থিতিতে মোদি চীনে গেলে ভূরাজনৈতিক সমীকরণের এক নতুন দিক উন্মোচিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রও নিশ্চিতভাবে এসসিও সম্মেলনের গতিপ্রকৃতি নিরীক্ষণ করবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.