যানজটের ভোগান্তি ঢাকার চেয়ে কমই আছে বিশ্বে

আন্তর্জাতিক সূচকে পঞ্চম স্থানে

0
129
রাজধানীতে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে যানজট। রমজান শুরুর পর থেকে সড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ

সাধারণ সময়ে যেমন তেমন, রমজানে নাভিশ্বাস উঠেছে যানজটে। প্রতিদিন অফিস শেষে সড়কে নিশ্চল গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হচ্ছে। এক কিলোমিটার পথ যেতে ঘণ্টা পার হচ্ছে। বিশ্বের খুব কম শহরেই এমন বেদনাদায়ক যানজট দেখা যায়।
যানজটে ভোগান্তির শহর হিসেবে বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী। সময় অপচয় ও ট্রাফিকের অদক্ষতা সূচকেও এগিয়ে ঢাকা। বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘নামবিও’র ওয়ার্ল্ড ট্রাফিক ইনডেক্স-২০২৩ এ এসব তথ্য এসেছে। গতকাল বুধবার এ সূচক প্রকাশ করা হয়।
বিভিন্ন দেশের ২৩৯টি শহরকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে তালিকায়। যানজটের সূচকে প্রথম স্থানে রয়েছে নাইজেরিয়ার শহর লাগোস, দ্বিতীয় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস, তৃতীয় কোস্টারিকার সান জোসে, চতুর্থ শ্রীলঙ্কার কলম্বো, ষষ্ঠ ভারতের রাজধানী দিল্লি, সপ্তম সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ এবং অষ্টম স্থানে কলকাতা।

বিশ্বের সবচেয়ে কম যানজটপূর্ণ শহর নেদারল্যান্ডসের বেস্ট। নামবিওর তালিকায় এই পৌর শহরের অবস্থান ২৩৯ নম্বরে। এ ছাড়া ২৩৮তম স্থানে ক্রোয়েশিয়ার শহর স্প্লিট, ২৩৭তম স্থানে সুইজারল্যান্ডের বাসেল, ২৩৬তম স্থানে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা এবং ২৩৫তম স্থানে সার্বিয়ার নোভি সাদ।
হাজার হাজার কোটি টাকা খরচেও যানজট কমছে না রাজধানী ঢাকায়। এক দশকে পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন সড়ক হয়েছে। মেট্রোরেল, বাস রুট ট্রানজিটসহ (বিআরটি) নানা প্রকল্পের কাজ চলছে। কিন্তু যানজট কমেনি, বরং বাড়ছে। আন্তর্জাতিক তালিকায় তা স্পষ্ট।
বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউেটর (এআরআই) তথ্যানুযায়ী, ২০০৭ সালে ঢাকায় গাড়ির গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। ২০২২ সালে তা কমে হয়েছে ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। এই হারে গতি কমলে ঢাকা এক সময় নিশ্চল এবং পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হবে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীর যানজটের কারণে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা, যা দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৯ শতাংশ। কমছে মাথাপিছু আয়। এতে প্রবৃদ্ধি কমছে ৩ শতাংশের বেশি। দারিদ্র্য বিমোচনের হারও কমছে আড়াই শতাংশের কাছাকাছি।  যানজটের কারণে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সেই হিসাব যোগ করলে লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়বে।  দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা গ্রাস করছে যানজট।

যানজটের অন্যতম কারণ প্রাইভেটকার হলেও প্রতিদিন গড়ে এ ধরনের ৪০টি নতুন গাড়ি নামছে ঢাকার সড়কে। অন্যান্য যানবাহন পথে নামছে আরও ৪৫টি। গাড়ির সংখ্যায় লাগাম টানার উদ্যোগ নেই সরকারের।

দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেছেন, যানজট নিরসনে কখনও কাজই হয়নি, তাই যানজট কমেনি। শুধু বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যেম উন্নয়ন দেখানো যায়। ভূমি, সড়ক, পরিবহন ব্যবস্থাপনায় কখনও মনোযোগ দেওয়া হয়নি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও উন্নয়ন এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ঢাকাকে বাঁচানোর সময় চলে যাচ্ছে। গণপরিবহনের উন্নয়ন করে এখনও যানজট পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।  তা না করে প্রকল্প বিলাস চালিয়ে গেলে ঢাকা শহর পরিত্যক্ত হয়ে যাবে।

নামবিওর যানজটের সূচক নির্ধারণের জন্য কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে সড়কে ব্যয় হওয়া সময় বিবেচনায় নেওয়া হয়। যানজটে সময় অপচয়ের কারণে নিঃসরিত অতিরিক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা ‘কার্বন নিঃসরণ সূচক’ নির্দেশ করে। এই তালিকা তৈরিতে ট্রাফিক ব্যবস্থার সামগ্রিক অদক্ষতাও বিবেচনা করা হয়।

নামবিওর প্রতিবেদন বলছে, ঢাকায় কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের কারণে একজন যাত্রীর মাধ্যমে বছরে এক হাজার ৪৩৪ কেজির বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভারসাম্য তৈরি করার জন্য যাত্রীপ্রতি প্রয়োজন প্রায় ৬৬টি গাছ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.