পদধারী নেতার চেয়ে কম ভোট আ.লীগের প্রার্থীর

0
100
সিলেট জেলার মানচিত্র

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কসকনকপুর ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটিতে পদধারী নেতা রয়েছেন ৫১০ জন। এর বাইরে ক্ষমতাসীন এ দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীও আছেন। অথচ গত সোমবার এ ইউপিতে অনুষ্ঠিত চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনে দলের প্রার্থী ভোট পেয়েছেন মাত্র ৩০৩টি। এত কমসংখ্যক ভোট পাওয়া নিয়ে এখন দলের ভেতরে-বাইরে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

ফলাফল দেখে জানা গেছে, নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন চারজন। এর মধ্যে তিনজন স্বতন্ত্র। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আফজাল হোসেন। স্থানীয়ভাবে জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে পরিচিত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুস সাত্তার মঈন ৪ হাজার ১৫৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।

বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হোসাইন আহমদ লস্কর। তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৮০ ভোট। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শামীম আহমদ চৌধুরী ১ হাজার ৩৮৮ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। উপনির্বাচনে মোট ৫৮ দশমিক ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

প্রার্থীরা দুর্বল ছিলেন। দলের বিদ্রোহী প্রার্থীও ছিল। এসব নানা কারণেই নৌকা হেরেছে।

শফিকুর রহমান চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ

নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ মার্চ কসকনকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলতাফ হোসেন লস্করের মৃত্যু হয়। চেয়ারম্যানের শূন্য পদে সোমবার উপনির্বাচন হয়। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৫ হাজার ৮০৯।

ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভোটপ্রাপ্তির হিসাবে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদারের কেন্দ্র মুন্সিবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি পেয়েছেন মাত্র ১৭ ভোট। অন্যদিকে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদের কেন্দ্র হাতিডহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি ২৪টি ভোট পেয়েছেন।

দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, কসকনকপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। এর বাইরে ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট আরও ৯টি ওয়ার্ড কমিটিতে ৪৫৯ জন নেতা রয়েছেন। এসব কমিটির বাইরে যুবলীগের ইউনিয়ন কমিটিও এখানে আছে। এ ছাড়া দলের অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতা-কর্মীও রয়েছেন। তাঁদের ভোটও নৌকার প্রার্থী পাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক কর্মী অভিযোগ করেন, দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নেতা-কর্মীরা এখানে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে ছিলেন না। এমনকি দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই দলের প্রার্থীকে ভোট দেননি। এ কারণেই এখানে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে তৃণমূলে দলকে ঐক্যবদ্ধ করা না গেলে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দলকে সংকটে পড়তে হবে।

জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে অনেক সময় ভোটারেরা গোষ্ঠী ও আঞ্চলিক নানা ইস্যু বিবেচনায় নিয়ে ভোট দেন। এখানেও তা–ই হয়েছে। এখানে প্রতীকের চেয়ে এলাকায় প্রার্থীর ব্যক্তিগত অবস্থানকে ভোটারেরা বিবেচনায় নিয়েছেন।

মো. লোকমান উদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, ‘এ ছাড়া আমরা এখানে ইউনিয়নটির একজন সাবেক চেয়ারম্যানকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ভেবেছিলাম, কিন্তু পারিবারিক সমস্যার কারণে তিনি প্রার্থী বাছাইয়ের পাঁচ দিন আগে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত দলকে জানান। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে (আফজাল) প্রার্থী করা হয়েছে।’

বিশ্বনাথ উপজেলার পাঁচটি ইউপিতেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। এ উপজেলাটি জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরীর এলাকা।

ফলাফল দেখে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে দুটি ইউপিতে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী, দুটিতে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী এবং একটিতে দলনিরপেক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন।

বিজয়ীদের মধ্যে অলংকারী ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান। তিনি উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি। তিনি পেয়েছেন ৪ হাজার ৭২৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি (নির্বাচনের আগে বহিষ্কৃত) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল ইসলাম রুহেল পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৪১ ভোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহ তাজুল ইসলাম পেয়েছেন মাত্র ৭৩৪ ভোট।

রামপাশা ইউপিতে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ইমাম উদ্দিন ৫ হাজার ৮৮৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক (নির্বাচনের আগে বহিষ্কৃত) বশির আহমদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৮০ ভোট। নৌকার প্রার্থী আরব আলী ১ হাজার ৫০৫ ভোট পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে আছেন।

দৌলতপুর ইউপিতে বিজয়ী হয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক (নির্বাচনের আগে বহিষ্কৃত) মো. আরব খান। তিনি পেয়েছেন ৮ হাজার ৮৬৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের ওয়াহাব আলী পেয়েছেন ২ হাজার ৪১১ ভোট।

বিশ্বনাথ সদর ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী দয়াল উদ্দিন ৩ হাজার ৮৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আবদুল জলিল হিরণ মিয়া পেয়েছেন ১ হাজার ২৮০ ভোট।

আর দেওকলস ইউপিতে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ফখরুল ইসলাম ২ হাজার ৭০৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম ১ হাজার ৯৫৭ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, দলের অনেক নেতা-কর্মী আড়ালে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন। অনেকে নৌকায় ভোট না দিয়ে প্রতিপক্ষকে ভোট দিয়েছেন। এ ছাড়া দুটি ইউনিয়নে দলের তিনজন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীও ছিলেন।

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রার্থীরা দুর্বল ছিলেন। দলের বিদ্রোহী প্রার্থীও ছিল। এসব নানা কারণেই নৌকা হেরেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.