সারা দেশে অর্থনৈতিক শুমারি হবে। এ জন্য ৫৭৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গত মঙ্গলবার পাস করা হয়েছে। কিন্তু কিছু খাতে অস্বাভাবিক বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সে জন্য প্রকল্পটি আবার যাচাই–বাছাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী রোববার পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। প্রশ্ন উঠেছে এমন কিছু বরাদ্দের উদাহরণ দেওয়া যাক। যেমন ৪০টি কম্পিউটার ও আনুষাঙ্গিক সামগ্রী কেনার ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু তথ্য–উপাত্ত নিরাপদ রাখার একটি সার্ভার (ক্লাউড সেবা) কিনতেই লাগবে ১২ কোটি টাকা। বাকি টাকায় কম্পিউটার ও ল্যাপটপ কেনা হবে।
এ ছাড়া সফটওয়্যার কেনার খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা। তথ্য সংরক্ষণের খরচ ছয় কোটি টাকা। আর দুই বছরের এই প্রকল্পে কম্পিউটার ও সফটওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।
অন্যদিকে মোবাইল ফোন রিচার্জ ও এসএমএস পাঠানো বাবদ পৌনে চার কোটি টাকা খরচ হবে। অর্থনৈতিক শুমারির জন্য নাকি চার কোটি এসএমএস পাঠানো হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় চার কোটি পরিবারকে খুদে বার্তা পাঠানো হবে। প্রতিটি খুদে বার্তার খরচ ধরা হয়েছে ২০ পয়সা। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ের কর্মীদের মোবাইল ফোনে সব মিলিয়ে তিন কোটি টাকার সমপরিমাণ রিচার্জ করা হবে। অর্থনৈতিক শুমারিসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান ও প্রচার করতে এই খাতে সব মিলিয়ে বরাদ্দ করা হয়েছে ৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘একনেক সভায় পাস হওয়ার পরও এই কম্পিউটার কেনাসহ কিছু খাতের বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আগামী রোববার পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক, পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসব।’
এম এ মান্নান আরও বলেন, ‘প্রকল্প প্রস্তাব নানা ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত হয়। একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) উত্থাপনের আগে একদম শেষ পর্যায়ে আমার কাছে আসে। তখন এত বিস্তারিত দেখার সুযোগ থাকে না।’
প্রকল্পটির মোট খরচ ৫৭৯ কোটি টাকা। মেয়াদ ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত। এই প্রকল্প আড়াই বছরে শেষ করতে হবে। এই প্রকল্পের জরিপ কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৩৯২ কোটি টাকা।
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই প্রকল্প চলার সময় ১ হাজার ৪৪১ জন হিসাব করে আপ্যায়ন খরচ ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ২৩ হাজার টাকা। জনপ্রতি আপ্যায়ন খরচ হবে ৯৫০ টাকা। এই খরচ সারা দেশের জন্য প্রযোজ্য। যদিও রাজধানীর মোটামুটি মানের রেস্তোরাঁয়ও একজন অতিথিকে ভরপেট খাওয়াতে ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যেই হয়ে যায়।
বই, সাময়িকী, প্রচারপত্র, অডিও-ভিডিও চিত্র, মুদ্রণ ও বাধাই, স্টেশনারি সামগ্রী এসব কিনতে আলাদা বরাদ্দ রাখা হলেও আবার মনিহারি সামগ্রী কেনার নামেও বিপুল অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সেখানে বরাদ্দের পরিমাণ ৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু কী ধরনের জিনিসপত্র কেনা হবে, তা প্রকল্প দলিলে উল্লেখ নেই।
প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পরামর্শক লাগে। এই প্রকল্পে চারজন পরামর্শকের এক বছরের সম্মানী ধরা হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রতি মাসে তাঁদের আড়াই লাখ টাকা সম্মানী দেওয়া হবে। এ ছাড়া ১০৭টি সভা-সেমিনার করে প্রকল্পের নানা দিক তুলে ধরা হবে। এ জন্য খরচ ধরা হয় ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রচার ও বিজ্ঞাপনে খরচ হবে প্রায় ৬ কোটি টাকা।
যোগাযোগ করা হলে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বিবিএসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ ঠিক করা হয়েছে। বাড়তি বরাদ্দ রাখা হয়নি।’