মেসি–আলভারেজ জাদুতে ফাইনালে আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনা ৩: ০ ক্রোয়েশিয়া

0
194
মেসি ও আলভারেজ নৈপুণ্যে বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা, ছবি: রয়টার্স

দুজনেই ‘এলএম-১০’। কিন্তু আজ একজনকে বিদায় নিতেই হতো। এটা যে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল! ক্রোয়েশিয়ার ‘এলএম-১০’ লুকা মদরিচ সব চেষ্টাই করলেন। কিন্তু লুসাইলের আইকনিক স্টেডিয়ামে রাতটা আসলে তাঁর দলের ছিল না। আরও নির্দিষ্ট করে বললে রাতটা মদরিচের ক্রোয়েশিয়ার হতে দেননি আর্জেন্টিনার ‘এলএম-১০’ লিওনেল মেসি। আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন এটা তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। আর শেষ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকে ফিরে যাওয়ার যে কোনো ইচ্ছে নেই সেটা মেসি আগেও বুঝিয়েছেন, বুঝালেন আজও।

পেনাল্টি থেকে নিজে গোল করলেন মেসি, হুলিয়ান আলভারেজকে দিয়ে করালেন আরও একটি। কম যাননি আলভারেজও। মেসির পাস থেকে দ্বিতীয় গোলটা করার আগে প্রায় একক প্রচেষ্টায় তিনিও অবিশ্বাস্য একটা গোল করেছেন। আলভারেজের দুই ও মেসির এক গোল মিলিয়ে আর্জেন্টিনা ম্যাচটা জিতেছে ৩-০ গোলে। ২০১৪ সালের পর আরও একবার উঠে গেছে বিশ্বকাপের ফাইনালে। অন্যদিকে গতবারের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়ার পথচলা এবার থেমে গেছে শেষ চারেই, শেষ হয়ে গেছে বিশ্বকাপে মদরিচ অধ্যায়ও

প্রথম আধঘন্টা আসলে ক্রোয়েশিয়াই খেলেছে। খেলেছে বলতে প্রথম স্পর্শেই দারুণ সব পাস দিয়েছে, আবার বলের দখলও রেখেছে। কিন্তু অ্যাটাকিং থার্ডে যেতে পারছিল না খুব একটা। সেই সময়টা আর্জেন্টিনা বরং ক্রোয়েশিয়ার খেলা নষ্ট করতেই বেশি ব্যস্ত থেকেছে। নিজেরা খুব একটা গুছিয়ে উঠতে পারছিল না। ১৬ মিনিটে একটা কর্নার পায় ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু বিপদ হতে দেননি আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডাররা।

২৪ মিনিটে এনজো ফার্নান্দেজ একটা শট নিয়েছিলেন বক্সের বাইরে থেকে। কিন্তু সেটা ঠেকাতে কষ্ট হয়নি ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক দমিনিক লিভাকোভিচের। দুই মিনিট পরে মেসির কাছ থেকে দারুণভাবে বল কেড়ে নিয়ে পাস বাড়ান মাতেও কোভাচিচ। বল ছুটতে থাকা ক্রামারিচকে আটকাতে গিয়ে তাঁকে ফাউল করে ফ্রি-কিক দেন তালিয়াফিগো। তবে মদরিচের সাদামাটা ফ্রি-কিক কাজে লাগাতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া।

৩১ মিনিটে নাহুয়েল মলিনার চোখ এড়িয়ে বাঁ দিক থেকে আর্জেন্টিনার বক্সে ঢুলে পড়েন ইভান পেরিসিচ। তবে তাঁর শট রদ্রিগো দি পলের গায়ে লেগে চলে যায় মাঠের বাইরে। তবে সেটা রেফারির চোখ এড়িয়ে যাওয়ায় কর্নার পায়নি ক্রোয়েশিয়া।

ম্যাচটা জমে উঠে এর পরপরই। রক্ষণভাগে ওতামেন্দির কাছ থেকে বল পেয়ে এনজো ফার্নান্দেজ লম্বা পাস বাড়িয়েছিলেন হুলিয়ান আলভারেজকে। ক্রোয়াট রক্ষণ ছিটকে দিয়ে ছুটে যাওয়া আলভারেজকে ঠেকাতে সামনে এগিয়ে এসে শরীর দিয়ে বাধা দেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। তাঁকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি।

স্পট কিক থেকে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। এটা ম্যাচের ৩৪ মিনিটের কথা। এই বিশ্বকাপে এটা মেসির পঞ্চম গোল, সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে ১১টি গোল হলো আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের। কিংবদন্তি বাতিস্তুতাকে ছাড়িয়ে মেসিই এখন বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা।

কিন্তু ম্যাচের সেরা মুহুর্ত আসলে তখনো আসেনি। হুলিয়ান আলভারেজ পেনাল্টি এনে দিয়েই দায়িত্ব শেষ মনে করেননি যে! মিনিট পাঁচেক পরে মাঝমাঠে ফাউলে পড়ে গিয়ে মেসি ফ্রি-কিকের আবেদন করছেন, বল আলভারেজের পায়ে দেখেই হয়তো রেফারি খেলা চালিয়ে গেলেন। ড্রিবল করে তিন ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়কে পেরিয়ে গেলে আলভারেজ। ও দিকে রদ্রিগো দি পল ও মলিনা ছুটে গিয়ে বিভ্রান্ত করে দিলেন ক্রোয়াট রক্ষণভাগকে।

ডি-বক্সে ঢুকে আলভারেজ ক্রোয়াট ডিফেন্ডার বোরনা সোসাকেও কাটালেন, তারপর লিভাকোভিচকে কাটিয়ে বল পাঠালেন জালে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যারাডোনার মতো নয় হয়তো, তবে আলভারেজের গোলটা দেখে সবার আগে হয়তো দর্শকদের ওই গোলের কথাই মনে হয়েছে।

ম্যাচটা ওখানেই অর্ধেক শেষ হয়ে গিয়েছিল। যেটুকু বাকি ছিল সেটা বিরতির পর মাঠে নেমে শেষ করে দিলেন আবার সেই মেসি-আলভারেজ জুটি। ৬৯ মিনিটের সেই গোল অবশ্য একেবারে নিখাদ মেসি-জাদু।

ডান পাশ দিয়ে ক্রোয়াট রক্ষককে এলোমেলো করে দিয়ে বল নিয়ে ঢুকলেন, ইওস্কো গাভারদিওলকে কাটাতে বল নিয়ে গেলেন একেবারে সীমানার কাছাকাছি। সেখান থেকে কাট ব্যাক করে আলভারেজকে পাস বাড়ালেন। এই গোল নষ্ট করার লোক আলভারেজ নন। আলভারেজের আগের গোলটা যদি টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা গোল হয়, মেসি এই অ্যাসিস্ট সম্ভবত টুর্নামেন্টের সেরা অ্যাসিস্ট।

এরপর আর ক্রোয়েশিয়া এই ম্যাচে ফিরতে পারে নাকি!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.