শুধু গুঞ্জন নয়, একরকম নিশ্চিতই ছিল। ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমগুলোও আগাম জানিয়ে দিয়েছিল সবকিছু। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম তো আগেই ব্যালন ডি’অরের ওপর তাঁর মুখও বসিয়ে দিয়েছিল। অপেক্ষাটা তাই ছিল শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার। সেই ঘোষণাটাই আজ উচ্চারিত হলো প্যারিসের তিয়াটর দু শাতলে। অষ্টমবারের মতো ব্যালন ডি’অর জিতেছেন লিওনেল মেসি।
ব্যালন ডি’অর ২০২৩ জেতার দৌড়ে মেসি এবার পেছনে ফেলেছেন ম্যানচেস্টার সিটির নরওয়েজীয় তারকা আর্লিং হলান্ড এবং পিএসজির ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেকে।
সাদা শার্টের ওপর কালো কোট এবং কালো বো টাই পরে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন মেসি। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন তিন ছেলে ও স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো। লিও লিও ধ্বনির মধ্যে প্রথমে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে এবং পরে একক ছবিও তোলেন মেসি।
এদিন আইভরি কোস্টের কিংবদন্তি ফুটবলার দিদিয়ের দ্রগবার সঙ্গে পুরস্কার অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ফরাসি সাংবাদিক ও উপস্থাপক স্যান্ডি হেরিবার্ট। ফুটবলের নক্ষত্রদের ভিড়ে আলাদাভাবে দৃষ্টি কেড়েছে টেনিস মহাতারকা নোভাক জোকোভিচের উপস্থিতিও।
অনুষ্ঠানে সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের কোপা ট্রফি জিতেছেন রিয়াল মাদ্রিদের ইংলিশ তারকা জুড বেলিংহাম। বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন স্প্যানিশ বিশ্বকাপজয়ী নারী ফুটবলার আইতানা বোনামাতি। আর অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ বর্ষসেরা পুরুষ ফুটবলারের পুরস্কার উঠেছে মেসির হাতে। মেসির ৮ম ব্যালন ডি’অর জেতার ঘোষণা দেন ইংলিশ কিংবদন্তি ডেভিড বেকহাম।
মেসির নাম ঘোষণার পর উপস্থিত সকলেই দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান জানান। পুরস্কার পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় মেসি বলেছেন, ‘মুহূর্তটা উপভোগের জন্য এখানে আরেক উপস্থিত হতে পেরে আমি আনন্দিত।’ এ সময় বিশ্বকাপ জেতা নিয়েও নিজের অনুভূতিটা আরেকবার জানান মেসি, ‘বিশ্বকাপ জেতাটা ছিল আমার স্বপ্ন। এটা খুবই বিশেষ ব্যাপার ছিল যে, অন্য দেশের মানুষরাও চেয়েছে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতুক।’
নিজের অর্জন নিয়ে মেসি আরও বলেছেন, ‘আমার এমন ক্যারিয়ার আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি যা অর্জন করেছি তা করার জন্য আমার ভাগ্য দারুণ সুপ্রসন্ন ছিল। আমি বিশ্বের সেরা দলে খেলেছি, ইতিহাসের সেরা দলে খেলেছি। এটা আমার জন্য ট্রফি জেতা এবং ব্যক্তিগত পুরস্কার জেতার কাজটাকে সহজ করেছে।’
গত মৌসুমটা স্বপ্নের মতোই কেটেছে মেসির। মৌসুমটিতে ক্যারিয়ারে একমাত্র অপূর্ণতাটুকুও ঘুচিয়েছেন ইন্টার মায়ামি তারকা। ৩৬ বছর পর মেসির হাত ধরেই বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে টুর্নামেন্টেরে সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। বিশ্বকাপ জিতে নিজের সব চাওয়া পাওয়া পূর্ণ হওয়ার কথাও বলেছিলেন মেসি।
কিন্তু ভক্ত-সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল বিশ্বকাপ জয়ের বছরে ব্যালন ডি’অরের পুরস্কারটাও মেসির হাতেই উঠুক। প্যারিসে সেই সমর্থকরাই যেন আজ জিতেছেন। নয়তো মেসি তো ব্যালন ডি’অর নিয়ে নিজের আর কোনো আকাঙ্ক্ষা না থাকার কথা জানিয়েই দিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘সত্যি হচ্ছে, এটা নিয়ে আমি অতটা ভাবছি না। যদি পুরস্কারটা পাই, ভালো। আর যদি না পাই, কিছুই আসে যায় না।’
ব্যালন ডি’অর নিয়ে এমন নির্লিপ্ততা কেন, সেই কারণও জানিয়েছেন মেসি, ‘আমি আমার ক্যারিয়ারে এটা অনেকবার বলেছি যে ব্যালন ডি’অর গুরুত্বপূর্ণ একটা পুরস্কার। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এটা সবচেয়ে সুন্দর পুরস্কার। কিন্তু আমি কখনোই এটাকে অতটা গুরুত্ব দিইনি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল দলীয় অর্জন।’
তবে মেসির এই নির্লিপ্ততাও ব্যালন ডি’অরকে তাঁর দিকে আসা থেকে রুখতে পারেনি। একই সঙ্গে এই পুরস্কার তাঁকে ফের প্যারিসেও ফিরিয়ে এনেছে। পিএসজিতে দুই বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে গত মৌসুম শেষে প্যারিস ছেড়েছিলেন মেসি। তবে এবার চওড়া হাসি নিয়ে প্যারিস ছাড়তে পারবেন ‘এলএম টেন’।
কে কোন পুরস্কার জিতছেন
বর্ষসেরা পুরুষ খেলোয়াড়- লিওনেল মেসি
বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড়- আইতানা বোনামাতি
বর্ষসেরা ক্লাব (পুরুষ)- ম্যানচেস্টার সিটি
বর্ষসেরা ক্লাব (নারী)-বার্সেলোনা
লেভ ইয়েশিন ট্রফি (সেরা গোলরক্ষক)- এমিলিয়ানো মার্তিনেজ
জার্ড মুলার ট্রফি (সেরা স্ট্রাইকার)- আর্লিং হলান্ড
সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড (দাতব্য কাজে সম্পৃক্ততা)- ভিনিসিয়ুস জুনিয়র
কোপা ট্রফি (অনূর্ধ্ব ২১ বছর বয়সী সেরা খেলোয়াড়)- জুড বেলিংহাম