৪ আগস্ট শুটিং স্পটে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা ভুলতে পারছেন না অভিনেতা মাসুম বাশার। এই অভিনেতা বলছেন, তাঁকে নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছেন অভিনেত্রী রুকাইয়া চমক। এ ঘটনায় মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন মাসুম বাশার। তিনি বিচার চেয়ে অভিনয় শিল্পী সংঘের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘আমার জীবনে শুটিংয়ে এমন ঘটনা দেখিনি, মেয়েটি কীভাবে আমাকে নিয়ে সবার সামনে মিথ্যা বলল।’
ওই দিনের ঘটনা নিয়ে কথা হয় জ্যেষ্ঠ অভিনেতা মাসুম বাশারের। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এগুলো কোথাও গ্রহণযোগ্য নয়। আমার জীবনেও এমনটা দেখিনি। প্রথমবার দেখলাম। শিল্পী তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষ বা কোনো মানুষের কাছেও কাম্য নয়। শিল্পীকে সব সময় ভালো মানুষ হতে হয়। সত্যবাদী হতে হয়। শিল্পী মিথ্যুক হতে পারেন না। শুটিং সেটেই মেয়েটি কান্না আর চিৎকার করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলছিল। এটা আমার জন্য বড় অপমানের।’ গতকাল বুধবার মাসুম বাশার গাজীপুরের হোতাপাড়ায় ‘অগ্নীগিরি’ নাটকের শুটিং করছিলেন। সেই নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকেই কথা বললেন। জানালেন শিল্পী হিসেবে অনিরাপত্তার কথা, অনিশ্চয়তার কথা।
শিল্পীরা সবাই মিলে একটা পরিবার। নিজের সেই পরিবারের অসম্মান পেয়ে কিছুটা ভেঙে পড়েছেন মাসুম বাশার।
তিনি বলেন, ‘এমন ব্যবহারে আমার জায়গাটা কোথায় থাকে? এগুলোর একটা বিহিত হওয়া দরকার। কারণ, এ ধরনের আচরণ আমার সঙ্গে আগে কেউ করেনি। শুরুতেই এ ধরনের ঘটনা থামিয়ে না দিলে ঘটনাগুলো বাড়তেই থাকবে। আমাদের সম্মান থাকবে না। মেয়েটি আমাকে নিয়ে যা বলেছে, সবই মিথ্যা। আমি নাকি তাকে মারতে যাচ্ছিলাম। সে যতগুলো কথা বলেছে, সবই মিথ্যা। অন্যদের কাছে ঘটনা শুনুন। এখন দেখা যাক, অভিনয় শিল্পী সংঘ কী করে। সম্মানটাকে যদি রিস্টোর করে আনা না হয়, তাহলে সিনিয়র শিল্পীরা অ্যাক্টর ইকুইটির ওপর কি ভরসা থাকবে? আমার সংগঠনের প্রতি আস্থা আছে। আমি দেখেছি, আমাকে নিয়ে মিথ্যা ঘটনা ছড়ানো হচ্ছে; কিন্তু সংগঠন আমাকে বলেছিল, কথা না বলতে। আমি তাদের কথা শুনেছি। আমার আস্থা আছে সংগঠনের ওপর।’
সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে মাসুম বাশারের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, বেলা ১১টার দিকে শুটিংয়ে এসেই অন্য রকম আচরণ শুরু করেন রুকাইয়া জাহান চমক। প্রথম তিনি সহকারী পরিচালকের ওপর তেড়ে যান। কারণ, সহকারী পরিচালক তাঁকে কেন কলটাইম জানানোর জন্য ফোন করেছিলেন। এই নিয়ে ঝামেলা মীমাংসা করা হয়। পরে শুটিং শুরু হয়। এখানেও নতুন করে নাটকীয়তা শুরু করেন চমক। তিনি শুটিংয়ের ফাঁকে কাউকে কিছু না বলেই খেতে যান। পরে হঠাৎ করেই চমক শুটিংয়ে জানান, তাঁকে শুটিংয়ের প্রোডাকশন ম্যানেজার নাকি ‘চমৎকার’ বলে টিপ্পন্নি কেটেছেন। এটাকে চমক অপমান মনে করে বলেন, শুটিং করবেন না। পরে পরিচালক ক্ষতিপূরণ চাইলে ঘটনা অ্যাক্টর ইকুইটি ও ডিরেক্টরস গিল্ডকে অবহিত করা হয়। তাঁরা সিনিয়র হিসেবে মাসুম বাশারকে অনুরোধ করেন শুটিং চালিয়ে যেতে। সেই মতো পদক্ষেপ নেন মাসুম বাশার।
‘ঘটনা এখানেই শেষ নয়, কিছুক্ষণ পর চমক একপর্যায়ে জানায়, সে নিরাপত্তা বোধ করছে না। চলে যাবে। এ জন্য কান্না করতে থাকে।’
মাসুম বাশার লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘চমককে বলা হয়, যদি শুটিং করতে চায়, তাহলে কেউ ডিস্টার্ব করবে না। তাকে ডিস্টার্ব করাও হচ্ছে না। আর শুটিং না করলে পরিচালক তাকে জানান, ক্ষতিপূরণ দিতে। একপর্যায়ে শুটিং করতে রাজি হয় চমক। পরে শুটিং শুরু হতে না হতেই পুলিশ চলে আসে। এটা আমার কাছে অপমান মনে হওয়ায় চমককে জিজ্ঞেস করি, “তুমি পুলিশ ডেকেছ কেন?” সে আবার চিৎকার করে বলে, “আমি পুলিশ ডাকি নাই। কোথায় পুলিশ?” তখন বলি, “আমরা বুঝিয়ে পুলিশকে বিদায় করেছি। এটা সাংগঠনিকভাবে সমাধান করা হবে। এখানে পুলিশ ডাকার দরকার নেই।” সে আমার কোনো কথাই শুনছিল না। কান্না করছিল আর দ্রুত কথা বলায় কোনো কথাই বোঝা যাচ্ছিল না। এর মধ্যেই সে আমাকে বলে, “হু আর ইউ। হোয়াই ইউ আর আস্কিং মি, ইউ হ্যাভ নো রাইট টু টক মি।” আমি তাকে জোরে শাটআপ বলি।’
ঘটনা কোন দিকে যাচ্ছে, তখন বুঝতে পারেননি মাসুম বাশার। অভিযোগ সূত্র আরও জানা যায়, সিনিয়র হিসেবে তিনি কোনো সম্মানই পাচ্ছিলেন না। চমককে নানাভাবে বুঝিয়েও কোনো লাভ হচ্ছিল না।
পরে রুপসজ্জা রুমেও ঘটে তুলকালাম। মাসুম বাশার বলেন, ‘আবার পুলিশ আসে। চমক মেকআপ রুমে ছিল। আমরা চাইছিলাম শুটিং হাউসের ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলি। কিন্তু পুলিশ চমককে ফোন দিয়ে মেকআপ রুমে প্রবেশ করে। আমরাও যাই সেখানে। আমি ঢোকামাত্র চমক চিৎকার করে আমাকে দেখিয়ে দিয়ে বলতে থাকে, “ওই লোকটা আমাকে মেরে ফেলবে, আমাকে বাঁচান।” সেই পুলিশের এসআই আমার ফোন কেড়ে নেন। আমি যতবার পুলিশকে সত্য ঘটনা বলতে যাই, ততবার মেয়েটি বাধা দেয়। আমাকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলতে থাকে। এই ছিল আমার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পাওনা? মেকআপ রুমে তুলকালাম, মেয়েটি চিৎকার করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলছিল। সেখানে তো পুলিশ আসার কথা না। আমি এই মিথ্যা অভিযোগের বিচার চাই!’
জানা যায়, সেদিন তাঁরা অংশ নিয়েছিলেন ‘শ্বশুরবাড়িতে প্রথম দিন’ নামের একটি নাটকে। সেই নাটকের পরিচালক আদিব হাসান ডিরেক্টরস গিল্ডে বিষয়টি জানিয়েছেন। নাটকে চমকের সহশিল্পী ছিলেন আরশ খান। এই অভিনেতাও চমকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। চমকও অভিনয় শিল্পী সংঘের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। জানা যায়, সংগঠনগুলো দ্রুত একসঙ্গে বসে ঘটনার বিচার করবে।