মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে রাখাই আমাদের সফলতা: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

0
118
মূল্যস্ফীতি, প্রতীকী ছবি

১০ শতাংশের নিচে মূল্যস্ফীতি রাখাকেই বড় সাফল্য মনে করছে সরকার। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেছেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের কঠিন সময়ে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে রাখাই আমাদের সফলতা। গত এক বছরে অনেক নীতি নিয়েছি এবং তা কাজ করেছে বলে মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কের ঘরে আছে। তা না হলে মূল্যস্ফীতি ১৩-১৪ শতাংশ হতো। মূল্যস্ফীতি কমতে সময় লাগে।’

আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আগারগাঁওয়ের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত আগস্ট মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ হয়েছে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা ১১ বছর ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর আগস্ট মাসে খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি কমাতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এ সম্পর্কেও কথা বলেন শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘চাল আমদানিতে কর ভার ছিল ৬০ শতাংশের মতো। এখন তা কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। নীতি সুদহার দুইবার বাড়ানো হয়েছে। এখন ‘নয়ছয়’ সুদের হার কার্যকর নয়। কয়েক মাস আগেই তা বাদ দেওয়া হয়েছে। আবারও নীতি সুদহার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এগুলো মুদ্রানীতির কার্যক্রম। এ ছাড়া কৃষিঋণ সব ছাড় হচ্ছে কি না, তা তদারক করা হচ্ছে। এতে উৎপাদন সক্রিয় রাখা হচ্ছে। আমদানি নিয়ন্ত্রণ করেছি। ডলারের দাম ২৬ শতাংশ বেড়েছে। এর সুবিধাও আছে। সুবিধা পাচ্ছেন দেশের রপ্তানিকারকেরা।’

শামসুল আলম মত দেন, সুদের হার বাড়ালে উদ্যোক্তাদের খরচ বাড়ে। তাহলে প্রবৃদ্ধিকে গলা চিপে ধরা হবে। চট করে সুদের হার বাড়ানো যায় না।

আগামী নভেম্বর মাসের আগে মূল্যস্ফীতি কমার বিষয়ে প্রত্যাশা করছেন না পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা মূল্যস্ফীতির একটি বার্ষিক চক্রে পড়ে গেছি। আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে এমনিতেই মূল্যস্ফীতি বেশি থাকে। তবে খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই। আগামী নভেম্বর থেকে মূল্যস্ফীতি কমে যাবে।’

শ্রীলঙ্কা মূল্যস্ফীতি কমাতে পারলে আমরা কেন পারছি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে শামসুল আলম বলেন, শ্রীলঙ্কা সুদের হার বাড়ানোর ফলে তাদের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে গেছে। আমরা নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে যেতে চাইছি না। তাহলে চাকরিবাকরি যা আছে, সব চলে যাবে। মানুষের দারিদ্র্য বাড়বে। অর্থনীতি ‘রুদ্ধ’ (চোকড) হয়ে পড়বে।

সরকার কি বেশি টাকা ছাপাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শামসুল আলম বলেন, সরকার প্রয়োজনমতো নোট ছাপাচ্ছে। কাগজের নোট দ্রুত নষ্ট হয়। একসময় হয়তো সব প্লাস্টিকের নোট হয়ে যাবে।

গত ২৯ আগস্ট একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, ‘আমি ঝুঁকি নিয়ে বলতে পারি, আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি ২-৪ পয়েন্ট কমবে।’ ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল্যস্ফীতি কমানোর নির্দেশ দেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে আজকের একনেক সভা শেষে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমি ‘ঝুঁকি নিয়ে’ শব্দটি বলেছিলাম। আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এর মানে, ঝুঁকি সত্যি হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে সহনীয় মাত্রায় মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।
মূল্যস্ফীতির কারণ খোঁজা বিবিএসের কাজ নয়

একই অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন বলেন, ‘বিবিএসের কাজ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি গণনা করা। মূল্যস্ফীতি কেন বাড়ছে, কেন কমছে, তা খোঁজার কাজ বিবিএসের নয়। বিবিএসের কাজ শুধু হিসাব-নিকাশের। কীভাবে মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে, তা-ও বিবিএসের কাজ নয়।’

শাহনাজ আরেফিন আরও বলেন, ‘২৪২টি পণ্য দিয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এবং ৫৬০টি পণ্য ও সেবা দিয়ে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করা হয়। খাদ্য মূল্যস্ফীতি গণনায় চাল, ডাল, শাকসবজি, মাছ-মাংসের ‘ভর’ (ওয়েটেজ) বেশি। আবার চকলেট, কোমল পানীয়—এসবের ভর কম। দেশের ১৫৪টি বাজার থেকে পণ্যমূল্য নেওয়া হয়।

এদিকে আজকের একনেক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াসার পানির উৎপাদন ও সরবরাহের মূল্য সমন্বয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া রাজস্ব আদায় বাড়াতে শুল্ক-কর সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির তাগিদও দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে তিনি বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল থেকে আরও বেশি অর্থ ছাড় করতে বদ্বীপ পরিকল্পনার আওতায় আরও প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, জলবায়ু তহবিল থেকে বাংলাদেশ ১০০ কোটি ডলার পর্যন্ত পেতে পারে।

আজ একনেক সভায় মোট ১৮ হাজার ৬৬ কোটি টাকার ১৯টি প্রকল্প পাস হয়। এতে সরকারি অর্থায়ন ১২ হাজার ৬০ কোটি টাকা, আর বিদেশি ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। বাকি অর্থ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা দেবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.