ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) বলেছে, মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই শেষ হয়নি। মূল্যস্ফীতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নিয়ে আসতে আরবিআইকে এই পথপরিক্রমার শেষ পর্যায়ে আগের নীতিতেই থাকতে হবে।
আরবিআই স্টেট অব দ্য ইকোনমি বা অর্থনীতির পরিস্থিতি-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলেছে, বর্ষা মৌসুমের শুরুতে সাধারণত মূল্যস্ফীতির হার বাড়ে, সে জন্য মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে তাদের এ অবস্থান অব্যাহত থাকবে। খাদ্যের ক্রমবর্ধমান দামের পরিপ্রেক্ষিতে জুনে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৮ শতাংশে উঠেছে। তাই আরবিআই যে নীতি সুদহার কমাবে, অনেকের এমন প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না।
ইকোনমিক টাইমসের আরেক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এর আগে মে মাসের বার্ষিক হিসাবে ভোক্তা মূল্যসূচক বা সিপিআইয়ে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতি ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ, এপ্রিলে যা ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। ভারতে মে মাস পর্যন্ত খুচরা মূল্যস্ফীতির হার টানা চার মাস কমেছে, যদিও তা রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) নির্ধারিত সহনশীল সীমার উচ্চতম হারের চেয়ে সামান্য বেশিই ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টমেটোর মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে অন্যান্য পণ্যেরও দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ে অনিশ্চয়তা বড় উদ্বেগের কারণ। আরবিআই আরও বলেছে, যেভাবে গত কয়েক বছরে পণ্যের দাম বেড়েছে, তাতে মূল্যস্ফীতির এই অনিশ্চয়তা দূর করতে সরবরাহব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে।
মূল্যস্ফীতির বাড়তি হার সত্ত্বেও আরবিআই অর্থনীতি সম্পর্কে ইতিবাচক। প্রতিবেদনে তারা বলেছে, জুন মাসে প্রবৃদ্ধির কিছুটা নিম্নগতি সত্ত্বেও ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হতে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতে কর্মসংস্থানের হার বৃদ্ধির কারণে অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় অনেকটা বেড়েছে। এ ছাড়া ভারতের জিডিপিতে শ্রমশক্তির হিস্যা ১ শতাংশীয় পয়েন্টে উন্নীত হতে পারে। শ্রমশক্তির ক্রমবর্ধমান উৎপাদনশীলতা টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া এই জনসংখ্যাতাত্ত্বিক সুবিধা বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ছাড়া কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির সঙ্গে ভারতের সঞ্চয়ের হারও বাড়তে পারে।
গত জুনে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে আরবিআই নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস মূল্যস্ফীতির হার হ্রাসের প্রসঙ্গ মাথায় রেখেও তখন বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতির বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে, সে জন্য নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। জুন মাসে খুচরা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে আরবিআই যে আপাতত নীতি সুদহার কমাবে না, তা নিশ্চিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।