কিডনি রোগ এমন একটি শারীরিক সমস্যা। যেখানে কিডনিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রক্ত সঠিকভাবে পরিশোধন করে ফেলতে পারে না। যার ফলে শরীরে বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল জমে যায়। এটি হতে পারে তীব্র (হঠাৎ এবং স্বল্পমেয়াদী) অথবা দীর্ঘস্থায়ীও (ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ও দীর্ঘমেয়াদী) হতে পারে, যা সাধারণত আর ঠিক হয় না। যদিও কিডনি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে। তবে এখানে মুখ ও গলায় দেখা দেয়া পাঁচটি উপসর্গ তুলে ধরা হলো, যদিও এই লক্ষণগুলো শুধু কিডনি রোগেই হয়—এমন নয়।
মুখ ফোলা বা ফুলে ওঠা:

কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি হলো শরীরে ফোলাভাব দেখা দেয়া। যার প্রভাব প্রথমে মুখে দেখা যায়। যখন কিডনি শরীরের বাড়তি পানি ঠিকভাবে বের করতে পারে না, তখন সেই পানি শরীরে জমতে থাকে। এর ফলে মুখে ফুলে ওঠা দেখা যায়, বিশেষ করে চোখ ও গালের চারপাশে। এতে করে ত্বক টানটান অনুভব হতে পারে, এবং ত্বকের স্বাভাবিক লচনশক্তি বা ইলাস্টিসিটি প্রসারিত হয়ে যায়। এই ফোলাভাব পরে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যেমন: হাত, পা ও গোড়ালি। যদি অস্বাভাবিকভাবে মুখ ফুলে যায় এবং তা নিজে থেকে না কমে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।
ফ্যাকাশে, ধূসর বা হলদেটে ত্বকের রঙ:

যখন কিডনি ঠিকমতো কাজ না করে, তখন তা মুখ ও গলার ত্বকের রঙ ও গঠন বদলে দিতে পারে। কারণ, কিডনির সমস্যা হলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমে যায়, আর এগুলো ত্বকে প্রভাব ফেলে। ফলে মুখের ত্বক অনেক সময় ফ্যাকাশে, ধূসর বা হলদেটে দেখায়। এই রঙের পরিবর্তন বিশেষ করে মুখ ও গলায় বেশি বোঝা যায়। অনেকেই এই পরিবর্তন সহজে চোখে পড়ে।
এ ছাড়াও ত্বকে শুকনো, রুক্ষ বা খসখসে দাগ তৈরি হতে পারে। কারণ, কিডনি যখন ঠিকভাবে কাজ করে না, তখন শরীর বর্জ্য পরিষ্কার করতে পারে না এবং পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হয় — যা সরাসরি ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে। এই ধরণের পরিবর্তন ধীরে ধীরে ঘটে, তাই যারা কিডনি সমস্যায় ভোগেন, তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পরিবর্তন লক্ষ করেন।
চুলকানি ও লালচে দাগ:

দীর্ঘদিন ধরে কিডনির রোগ হলে রোগীরা সাধারণত তীব্র চুলকানিতে ভোগেন, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেড়ে যায়। এই ত্বকের অস্বস্তিকর অবস্থাকে ডাক্তাররা ‘প্রুরিটাস’ বলে। এটি মুখ ও গলার ত্বকে জ্বালা ও খুঁচখুঁচির মত অনুভূতি তৈরি করে, যা খুবই অস্বস্তিকর। বারবার চুলকানি এবং খোঁচানোর ফলে ত্বকে লাল দাগ, ছোট ছোট ফোঁটা বা র্যাশ তৈরি হয়। যদি খোঁচানোর কারণে ত্বকে ঘা বা ক্ষত হয় এবং তা পরিষ্কার না করা হয়, তাহলে সেই জায়গায় সংক্রমণ বা ব্যথা হতে পারে।
কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ও খনিজ সঠিকভাবে বের হয় না, যার ফলে এই পদার্থগুলো ত্বকের স্নায়ুগুলোকে জ্বালাতন করে। অতএব, মুখ ও গলায় বারবার চুলকানি এবং লাল দাগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এটা কিডনি সম্পর্কিত সমস্যা হতে পারে।
চোখের নিচে কালো দাগ বা বৃত্ত:

চোখের নিচে থাকা কালো দাগ বা বৃত্ত শুধু ক্লান্তির লক্ষণ নয়, এটি কিডনি রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেতও হতে পারে। যখন কিডনি ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে অতিরিক্ত তরল এবং বর্জ্য পদার্থ জমে থাকে। এ কারণেই চোখের চারপাশে ফোলাভাব এবং কালো দাগ দেখা দেয়। চোখের আশপাশের ত্বক খুবই পাতলা হওয়ায় এই পরিবর্তনগুলো সহজেই ধরা পড়ে, বিশেষ করে অন্ধকার ছোপ বা ফোলা আকারে।
এই দাগগুলো অনেক সময় আঘাত লাগার পর হওয়া কালচে দাগের মতো দেখায়, আর সঙ্গে ফোলাভাবও থাকতে পারে। যারা চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল বা কালো দাগ ভোগ করেন, তার মানে এই নয় যে সবার কিডনি সমস্যা আছে। কিন্তু যদি হঠাৎ এই দাগ দেখা দেয় অথবা অন্য উপসর্গ যেমন মুখ ফোলা বা অতিরিক্ত ক্লান্তির সঙ্গে বাড়তে থাকে, তাহলে অবশ্যই কিডনির পরীক্ষা করানো উচিত।
গলার শিরা ফুলে ওঠা ও ফোলাভাব:

কিডনির জটিল অবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত তরল জমে যায়, যা ফোলাভাব তৈরি করে এবং এর প্রভাব গলার শিরাগুলোতেও পড়ে। যখন হৃদপিণ্ড ও কিডনি উভয়ের কার্যক্ষমতা কমে যায় বা বাধাগ্রস্ত হয়, তখন গলার শিরাগুলো ফুলে ওঠে বা উঁচু হয়ে দেখা যায়। শরীরে অতিরিক্ত তরল জমে যাওয়ার ফলে রক্তনালির চাপ বেড়ে যায়, যার কারণে জাগুলার ভেইন ডিসটেনশন নামে একটি অবস্থা সৃষ্টি হয়।
গলার পাশে ফুলে থাকা বা উঁচু হয়ে থাকা শিরাগুলো অনেক সময় সহজেই দেখা যায়, বিশেষ করে কেউ শুয়ে থাকলে বা শারীরিক চাপ দিলে। গলার শিরায় যেকোনো অস্বাভাবিক ফোলা বা উঁচু হয়ে থাকা লক্ষণ দেখা দিলে, সেটি গুরুতর তরল ভারসাম্যহীনতা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
সেজন্য এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া খুবই জরুরি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া