মিয়ানমারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোটের (আসিয়ান) কর্মকর্তাদের বহনকারী গাড়িবহরে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ওই কর্মকর্তারা মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা দেওয়ার কাজে যুক্ত ছিলেন।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আসিয়ানের সদস্যরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুর। সেই সঙ্গে দেশ দুটি মিয়ানমারে চলমান সহিংসতা বন্ধের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে।
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় শান রাজ্যের সি হেসেং শহরে এই ঘটনা ঘটেছে। সেখানে আসিয়ানের মানবিক সহায়তা কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের গাড়িবহর লক্ষ্য করে গুলি করেছেন অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা।
আল-জাজিরার এক খবরে বলা হয়েছে, গত রোববার এ ঘটনা ঘটেছে।
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তেউকু ফাইজাসায়হা জানান, এই হামলার পেছনে কে বা কারা জড়িত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান হয়। নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা নেয় জান্তা। এর পর থেকে দেশটিতে চরম অস্থিতিশীলতা দেখা গেছে। জান্তা বিরোধীদের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ, তাদের দমনে সেনাদের দমনপীড়নে বহু প্রাণ গেছে। সহিংসতার জেরে অর্থনৈতিক অচলাবস্থায় পড়েছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধে ও শান্তি ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে আঞ্চলিক জোট আসিয়ান। বিবদমান সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মানবিক সহায়তা নিয়ে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এই জোট। বারবার আসিয়ানের পক্ষ থেকে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আসিয়ানের কর্মকর্তাদের বহরে হামলার ঘটনা ঘটল। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, আসিয়ানের ওই বহরে ইয়াঙ্গুনে সিঙ্গাপুর দূতাবাসের দুজন কর্মকর্তা ছিলেন। দুজনই অক্ষত আছেন, নিরাপদে ফিরে এসেছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মিয়ানমারে শান্তি ফেরানোর সহজ কৌশল হলো বিবদমান সব পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা এগিয়ে নেওয়া। তা না হলে দেশটির জনগণের স্বার্থরক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেছেন, গুলিবর্ষণের এই ঘটনা মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইন্দোনেশিয়া ও আসিয়ানের প্রচেষ্টাকে বাধা দেবে না। তবে তিনি আসিয়ানের কর্মকর্তাদের বহরে গুলির ঘটনার বিস্তারিত কিছু জানাননি।
জোকো উইদোদো আরও বলেন, ‘শক্তির ব্যবহার বন্ধ করুন। সহিংসতা বন্ধ করুন। কারণ, এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি কাউকে জয়ী করতে পারবে না।’
এদিকে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকার (জান্তাবিরোধী ছায়া সরকার নামেও পরিচিত) জানিয়েছে, আসিয়ানের কর্মকর্তাদের বহরে হামলার পেছনে তারা জড়িত নন।
অন্যদিকে, এ বিষয়ে জানতে জান্তার একজন মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সাড়া পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারে সংঘাত প্রশমন ও দেশটিতে শান্তি ফেরাতে অন্যতম স্টেকহোল্ডার হিসেবে কয়েক মাস ধরে অনেকটা নীরবে কাজ করে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটি ভারত, চীন ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে একযোগে মিয়ানমারে শান্তিপ্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগের জন্যও কাজ করছে।
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি গত শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের জোট আসিয়ানের সভাপতি হিসেবে মিয়ানমারে শান্তি ফেরাতে প্রচেষ্টা শুরু করেছে ইন্দোনেশিয়া। এ জন্য ইন্দোনেশিয়ার কূটনীতিকেরা মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে ৬০ বারের বেশি যুক্ত হয়েছে।
রেতনো মারসুদি আরও বলেন, মিয়ানমারের জান্তা সরকার, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র দল, দেশটির গণতন্ত্রপন্থী ছায়া সরকার—সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আলাপ-আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছে জাকার্তা।