থাইল্যান্ডে এ বছর মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার আয়োজকদের একজন পুরুষ কর্মকর্তা একজন প্রতিযোগীকে ধমকাচ্ছেন; সম্প্রতি এমন একটি ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হওয়ার পর নারীবিদ্বেষ, নারীর ক্ষমতায়ন ও আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে।
যে ভিডিও নিয়ে এত আলোচনা সেখানে দেখা যায়, মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনালের (এমজিআই) প্রেসিডেন্ট নাওয়াৎ ইৎসারাগ্রিসিল মেক্সিকোর ২৫ বছর বয়সী প্রতিযোগী ফাতিমা বোশকে ধমকাচ্ছেন।
এ মাসের শেষ ভাগে ব্যাংককে মিস ইউনিভার্সের ৭৪তম আসর বসতে যাচ্ছে। ১২০টির বেশি দেশের প্রতিযোগী এই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন।
মূল প্রতিযোগিতা শুরুর আগে চলছে অনুষ্ঠান-পূর্ব নানা আয়োজন। সরাসরি সম্প্রচারিত তেমনই একটি অনুষ্ঠানে দেখা যায়, নাওয়াৎ মেক্সিকোর প্রতিযোগী ফাতিমা বোশের বিরুদ্ধে আয়োজক দেশ থাইল্যান্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যথেষ্ট কনটেন্ট পোস্ট না করার অভিযোগ করছেন এবং অন্যান্য প্রতিযোগীর সামনে এ নিয়ে ফাতিমাকে ধমকাচ্ছেন।
ফাতিমাকে উদ্দেশ করে প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট নাওয়াৎ ‘নির্বোধ’ বলেন। কারণ, তাঁর মনে হয়েছে, ফাতিমা থাইল্যান্ডকে নিয়ে অনলাইনে প্রচারমূলক কার্যক্রম চালাচ্ছেন না।
যদিও পরে এক সংবাদ সম্মেলনে নাওয়াৎ দাবি করেন, তিনি ফাতিমাকে ‘নির্বোধ’ বলেননি। বরং তিনি বলেছেন, ফাতিমার কারণে ‘ক্ষতি হয়েছে’ (ড্যামেজড)।
ভিডিওতে দেখা যায়, মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল (এমজিআই)–এর প্রেসিডেন্ট নাওয়াৎ ইৎসারাগ্রিসিল মেক্সিকোর ২৫ বছর বয়সী প্রতিযোগী ফাতিমা বোশকে ধমকাচ্ছেন।
অপমানিত ফাতিমা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করলে তাঁর মুখ বন্ধ করতে নাওয়াৎ বলে ওঠেন, ‘আমি আপনাকে কথা বলতে বলিনি।’ এরপর তিনি নিরাপত্তারক্ষীদের ডেকে দাঁড়িয়ে থাকা ফাতিমাকে কক্ষ থেকে বের করে দিতে বলেন। সে সময় অন্যান্য প্রতিযোগী ফাতিমার প্রতি সমর্থন জানিয়ে উঠে দাঁড়ান এবং কক্ষ থেকে বের হয়ে যান।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী অন্যদের থামাতে প্রতিযোগিতার পরিচালক হুমকির সুরে বলেছিলেন, যদি তাঁরা এখনই বসে না পড়েন তবে তাঁদের প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
এ কাণ্ড নিয়ে দেশে-বিদেশে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে নাওয়াৎ জনসমক্ষে প্রতিযোগীদের কাছে ক্ষমা চান।
ওই ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবাউম নিজেও এ নিয়ে কথা বলেছেন। ক্লদিয়া শেনবাউম দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।
‘কীভাবে নারীদের প্রতিবাদ করা উচিত, ফাতিমা তার একটি উদাহরণ বলেও মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট শেনবাউম।’
শেনবাউম বলেন, থাইল্যান্ডে প্রতিযোগিতার আয়োজক প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তার আচরণ ছিল ‘খুবই আক্রমণাত্মক’। ফাতিমা বোশ ‘সম্মানের সঙ্গে’ তা সামলেছেন।
কীভাবে নারীদের প্রতিবাদ করা উচিত ফাতিমা তার একটি উদাহরণ বলেও মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট শেনবাউম।
ক্ষোভ এবং ক্ষমা
নাওয়াতের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার কিছুক্ষণ পর সংবাদমাধ্যমকে ফাতিমা বলেন, তাঁর সঙ্গে ওই থাই কর্মকর্তার দুর্ব্যবহারের মূল কারণ ছিল নাওয়াতের সঙ্গে মিস ইউনিভার্স অর্গানাইজেশনের বিরোধ, যার প্রেসিডেন্ট একজন মেক্সিকান।
টিকটকে পোস্ট করা এক ভিডিওতে ফাতিমাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি মনে করি, এটা অন্যায়। কারণ, আমি এখানে সবকিছু ঠিকঠাকভাবে করছি। আমি কারও সঙ্গে ঝামেলায় জড়াইনি। আমি শুধু চেষ্টা করি ভদ্র থাকতে। আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
আমি মনে করি এটা অন্যায়। কারণ, আমি এখানে সবকিছু ঠিকঠাকভাবে করছি। আমি কারও সঙ্গে ঝামেলায় জড়াই না। আমি শুধু চেষ্টা করি ভদ্র থাকতে। আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছি
সেখানে এই মেক্সিকান তরুণী আরও বলেন, ‘তিনি আমাকে মুখ বন্ধ রাখতে এবং আরও অনেক কিছু বলেছেন। আমি মনে করি, সারা বিশ্বের মানুষের এটা দেখা দরকার। কারণ, আমরা আত্মবিশ্বাসী নারী এবং এটি আমাদের আওয়াজ তোলার মঞ্চ। কেউ আমাদের কণ্ঠ রোধ করতে পারবে না।’
মিস ইউনিভার্স অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট রাউল রোচাও থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ী নাওয়াতের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং অনুষ্ঠানের পরবর্তী যেকোনো কার্যক্রমে তাঁর অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছেন।
গত বুধবার সরাসরি সম্প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে এসে নাওয়াৎ নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চান এবং জোর দিয়ে বলেন, কাউকে আঘাত করার ইচ্ছা তাঁর ছিল না। এ অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তিনি সম্মান করেন।
সে সময় মঞ্চে তাঁর পাশে বেশ কয়েকজন প্রতিযোগী দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ফাতিমাকেও দেখা গেছে।
নাওয়াৎ প্রতিযোগীদের বলেন, ‘আমি বলতে চাই, আমি সত্যিই খুব দুঃখিত।’
সিএনএন


















