মেহেদী হাসান মিরাজ টিম ম্যানেজমেন্টের বাজির ঘোড়া। সেই এশিয়া কাপ থেকেই তাঁকে নিয়ে ফাটকা খেলছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সে প্রতিদান ফিরিয়েও দিচ্ছেন মিরাজ। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টপঅর্ডারে নেমে করেন সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপ ম্যাচেও সে কৌশল কাজে লাগায়। বোলিংয়ের পর ব্যাটিং দুই বিভাগেই দুর্দান্ত করেন মিরাজ। অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে সম্মানিত হন ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে। ২৫ বছর বয়সী এ অলরাউন্ডারের দিনে বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে ছয় উইকেটে। বিশ্বকাপের মঞ্চে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এত সহজ জয় আশা করেনি কেউ, ভাবতে পারেননি মিরাজও।
আফগানিস্তানের ওপেনিং জুটি ব্যাটিংয়ের শুরুটা ভালো করায় কিছুটা চাপে ছিল বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান ব্রেকথ্রু দেওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফেরে। মিরাজ বোলিংয়ে এসে অধিনায়কের কাজ আরও সহজ করে দেন জুটি ভেঙে। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং আর কৌশলী ব্যাটিং জয়ের পথ সহজ করে দেয়। নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘এটা আমার জন্য দারুণ এক মুহূর্ত। আমি অনেক পরিশ্রম করেছি। টিম ম্যানেজমেন্টকেও এর কৃতিত্ব দিতে হবে। বোলিংয়ে আসার পর কিছুটা সতর্ক ছিলাম। তখন অধিনায়ক সঠিক জায়গায় ধারাবাহিক বল করতে বলেন। যেটা আমাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে। এ ছাড়া ব্যাটিংয়ে বল বাই বল খেলে যেতে চেষ্টা করেছি। উইকেটে কিছুটা টার্ন ছিল। আমি চেষ্টা করেছি টিকে থাকতে। সাধারণত আমি সব সময় ৮ নম্বরে খেলি (ব্যাটিং অর্ডার)। টপঅর্ডারে খেলাকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছি। আমার মধ্যে ভালো করার ক্ষুধা সব সময় থাকে। সেটাই পারফরম্যান্স দিয়ে করে দেখানোর চেষ্টা ছিল।’
মিরাজ এক দিনের ক্রিকেটে ছিলেন শুধু অফস্পিনার। নিজের চেষ্টায় হয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর একজন অলরাউন্ডার। গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে লোয়ার মিডল অর্ডারে নেমেও ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেছেন। ব্যাট করতে পারার সামর্থ্যই তাঁকে টপঅর্ডারে জায়গা করে দিয়েছে। গতকাল ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে নিজের ব্যাটিং সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যাটিং নিয়ে অনেক কাজ করেছি। অনেক চিন্তা করেছি, কীভাবে ব্যাটিং করলে আমার জন্য ভালো হবে। আমি ভালো করলে দিনশেষে দলই উপকৃত হবে। সেই মানসিকতায় নিজেকে প্রস্তুত করেছি। দলও আমাকে সাপোর্ট করেছে, বিভিন্ন জায়গায় সুযোগ দিয়েছে। আমার জন্য এটা অনেক বড় পাওয়া। আলহামদুলিল্লাহ ভালোও খেলছি।’
গতকাল ধর্মশালায় ৯ ওভার বোলিং করে ২৫ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন মিরাজ। বোলিং ইকোনোমি ২.৭৭। ব্যাট হাতে নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ৯৭ রানের জুটিতে ছিলেন কার্যকর। টার্নিং উইকেটে ৭৩ বলে করেছেন ৫৭ রান। যদিও তাঁর ইনিংসটি নিখুঁত ছিল না। লোয়ার অর্ডার থেকে জন্ম করে টপঅর্ডারে খেলা মিরাজ সত্যিই বাজিমাত করছেন।
শোনালেন মানিয়ে নেওয়ার গল্প, ‘ক্রিকেটারদের মানিয়ে নিতে হয়। শুধু আমি না, প্রত্যেকেই মানিয়ে নেন। বড় কিছু অর্জন করতে হলে মানিয়ে নেওয়া জরুরি। সব সময় তো ৮ নম্বরে ব্যাট করেছি। আমি যেটা চিন্তা করতাম– ৮ নম্বরে তো অনেক বড় ইনিংস খেলার সুযোগ পাওয়া যায় না, বল কম থাকে। ওপরে সুযোগ পেলে শতভাগ দিয়ে ভালো করার পরিকল্পনা ছিল। আমি বেশি কিছু চিন্তা করিনি। শুধু সুযোগ কাজে লাগানোর কথা ভেবেছি।’
মিরাজের বড় সুবিধা ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটই ভালোভাবে বোঝেন। খেলেনও ভালো।