মিয়ানমার সীমান্ত বন্ধ হলে সশস্ত্র আন্দোলনের হুমকি মিজোরামের সংগঠন জোরোর

0
70
মিজোরামের চাম্পাই জেলায় গত শুক্রবার জোরোর জনসভার একাংশ, ছবি: ইস্ট মোজো ওয়েবেসাইটের সৌজন্যে

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মিজোরাম রাজ্যে জোমি সম্প্রদায়ের রিউনিফিকেশন বা পুনরেকত্রীকরণের জন্য গঠিত সংগঠন জো রিউনিফিকেশন অর্গানাইজেশন (জোরো) উত্তর–পূর্বাঞ্চলের, বিশেষত মিজোরামের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তে বেড়া দেওয়ার এবং দুই দেশের মধ্যে অবাধ চলাচল বন্ধের ঘোর বিরোধিতা করেছে।

জোরোর সাধারণ সম্পাদক এল রামদিনলিয়ানা সম্প্রতি মিজোরামে বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার সীমান্তে প্রস্তাবিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলে রাজ্যের তরুণদের আবার অস্ত্র হাতে নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।

এই প্রথম উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনো সামাজিক সংগঠন মিয়ানমার–মিজোরাম সীমান্তে বেড়া দেওয়ার বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে সরাসরি অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার হুমকি দিল।

মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া মিজোরামের চাম্পাই জেলায় গত শুক্রবার এক জনসভায় জোরোর সম্পাদক রামদিনলিয়ানা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যদি সীমান্তে বেড়া দেওয়ার এবং এফএমআর (ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম বা অবাধ চলাচল) প্রত্যাহারের পরিকল্পনা অব্যাহত রাখে, তবে এ অঞ্চলের তরুণদের আবার অস্ত্র হাতে নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না।

মিজোরামের রাজধানী আইজলভিত্তিক গোষ্ঠী জোরো, যারা ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সব চিন-কুকি-মিজো-জোমি উপজাতিদের একটি প্রশাসনের অধীন এনে পুনরেকত্রীকরণ করাতে চায়।

জোরো সম্পাদকের এই হুমকি ভারতের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের। কারণ, মিজোরামে দীর্ঘদিনের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও স্বাধীনতাকামী সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। ১৯৬৬ সালে মিজো জাতীয়তাবাদী সংগঠন মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট পৃথক ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবিতে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করে। ভারতের বাহিনীর সঙ্গে ন্যাশনাল ফ্রন্টের একাধিক স্থানে প্রায় ২০ বছর ধরে লড়াই চলে। দুই পক্ষেই অসংখ্য মানুষ, বিশেষত মিজোরামের গ্রামীণ আদিবাসী মারা যান। এ লড়াইয়ের জেরে ভারত সরকারের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ১৯৮৬ সালে মিজো চুক্তি সম্পাদিত হয় এবং নতুন রাজ্য হিসেবে মিজোরামকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

সেই মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের গুরুত্বপূর্ণ নেতা জোরামথাঙ্গা গত বছর পর্যন্ত মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট এখন একটি মূল স্রোতের রাজনৈতিক দল হলেও তাদের লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে মিজোরামের অন্যতম প্রধান সামাজিক সংগঠনের সশস্ত্র আন্দোলনের ডাক যে উদ্বেগের, তা স্বীকার করছেন পর্যবেক্ষকেরা। সীমান্তের ওপার থেকে অবৈধ অভিবাসনের সমস্যা মোকাবিলায় অবাধ চলাচল বাতিলের পাশাপাশি মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার।

জাতিকে সীমানা দিয়ে আটকানো যায় না

জোরো সভাপতি আর সাংকাওইয়া বলেন, কিছু শক্তি একটি বেড়া তৈরি করে এবং এফএমআর বাতিল করে ‘জো-ফেট’ বা জাতিগত মিজোদের ঐক্যকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করছে। সেটা হতে দেওয়া যাবে না।

সাংকাওইয়া বলেন, ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে বসবাসরত জো-ফেটদের এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না, উচিতও নয়। কারণ, একটি জাতির কোনো সীমানা থাকে না। কোনো জাতিকে সীমান্তে দাগ টেনে অবরুদ্ধ করা যায় না।

তবে শুধু প্রভাবশালী সামাজিক সংগঠনই নয়, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোওমার রাজনৈতিক উপদেষ্টা লালমুয়ানপুইয়া পুন্টেও বলেছেন, মিজোরাম-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নদী তিয়াউয়ের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে বসবাসরত মানুষকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের আরোপিত সীমানার মাধ্যমে বিভক্ত করা যাবে না।

পুন্টে জোরোর সহসভাপতিও। তিনি জনসভায় বলেন, ‘আমরা কখনই ব্রিটিশ সরকারের চাপিয়ে দেওয়া সীমানা মেনে নেব না। এ বিষয়ে ভারত সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তার যথাযথ বিরোধিতা করব।’

মিজোরাম বিধানসভা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রের বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। সেই প্রস্তাবের কথাও মনে করিয়ে দেন পুন্টে।
মিজোরাম ও মিয়ানমারের চিন রাজ্যের মধ্যে ৪০০ কিলোমিটারের কিছু বেশি সীমান্ত রয়েছে। অবাধ চলাচল চুক্তির কারণে আন্তর্জাতিক সীমান্তের উভয় দিকে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত মানুষ যাতায়াত করতে পারেন।

রক্তের বন্ধন কখনো ছিন্ন হয় না

চাম্পাই জেলার জোখাওথারে গত দুই দিনের জনসভায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। এ সভার শিরোনাম ছিল—‘রক্তের বন্ধন কখন ছিন্ন হয় না’।

ভারতের কয়েকটি নিরাপত্তা সূত্রকে উদ্ধৃত করে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সীমান্তের দুই পাশের হাজার হাজার মানুষ, বিশেষ করে জোখাওথা ও আশপাশের গ্রামগুলোতে আশ্রয় নেওয়া উদ্বাস্তুসহ আইজল ও চাম্পাইয়ের মতো বড় জেলার মানুষও সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন। যাঁরা মিয়ানমারের অংশ থেকে মিজো নামে প্রবেশ করতে পারেননি, তাঁরা মিয়ানমারের চিন প্রদেশের খাওমাউয়ি নামের এক জায়গায় মিলিত হয়ে মিজোরামের সমাবেশকে সমর্থন দেন।

সরকারি মতে, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের কারণে এ পর্যন্ত ৩৪ হাজারের কিছু বেশি শরণার্থী মিজোরামে ঢুকেছে। বিভিন্ন শিবিরে এই মানুষেরা আশ্রয় নিয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.