রোহিঙ্গা সংকট ও মিয়ানমারে চলমান অস্থিরতার কারণে যে নিরাপত্তা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা আরও খারাপ হবে এবং প্রতিবেশি দেশগুলোতে এর প্রভাব অব্যাহত থাকবে বলে ঢাকা ও দিল্লিকে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তিনি মনে করেন, মিয়ানমার পরিস্থিতির সহসাই উন্নতি হচ্ছে না। এ কারণে বাংলাদেশ ও ‘সম্ভবত ভারতের জন্যও’ যে শরণার্থী সংকট ও নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি হচ্ছে, যা সামনে আরও গভীর হতে পারে।
ওয়াশিংটনের থিঙ্কট্যাঙ্ক ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিস (ইউএসআইপি)-এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ২ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল ও পেন্টাগনের অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে এসব কথা বলেন লু।
এ সময় ভারতসহ অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ে সফল কৌশলের উদাহরণ হিসেবে শ্রীলঙ্কার প্রশংসা করেছেন ডোনাল্ড লু। ভারতের প্রতিবেশি সম্পর্কে ওয়াশিংটনের ভাবনার বিষয়ে তিনি জানান, সম্প্রতি মালদ্বীপ সফরকালে তিনি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, বেইজিং যদি অন্যান্য দেশের সঙ্গে ‘সত্যিকারের প্রতিযোগিতার’ সম্মুখীন হয়, তবেই চীন তাদের জন্য মূল্যবান অংশীদার হতে পারে।
আফ্রিকার উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলোতে একসঙ্গে কী করা যেতে পারে, সে বিষয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনুষ্ঠেয় আলোচনার ইঙ্গিত টেনে লু ভারত মহাসাগরের ভারতীয় নেতৃত্ব এবং এই অঞ্চলে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেন।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের মতানৈক্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারত-চীন সীমান্ত সংঘাত এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘ঐতিহাসিক ও গভীর সংঘাত’র কথা তুলে ধরে তিনি জানান, মিয়ানমার পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি যথেষ্ট সময় ব্যয় করেছিলেন।
লু বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ, সেখানে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বার্মায় অস্থিরতা এই অঞ্চলের জন্য কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে অনেক সময় ব্যয় করেছি।’
তিনি বলেন, ‘এক মিলিয়নেরও বেশি লোকের জন্য ঢাকা যে উদারতা দেখিয়েছে তার সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে কাজ করেছে। অনন্য এই উদারতা দেখার জন্য আমার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির কক্সবাজার পরিদর্শন করার সুযোগ হয়েছিল। আমি এসব শরণার্থীকে ঘরে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলোর একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাও প্রত্যক্ষ করেছি।’
তিনি জানান, বার্মার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। তার উদ্বেগের কারণ হলো বাংলাদেশ ও ‘সম্ভবত ভারতের জন্যও’ যে শরণার্থী সংকট ও নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি হচ্ছে তা নিয়ে, যা সামনে আরও গভীর হতে পারে।
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং এই অঞ্চলে আমাদের অংশীদারদের, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতকে সমর্থন করতে হবে, যাতে তারা তাদের দেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা বাড়তে না দিয়ে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারে।’
বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল প্রণয়নের বিষয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এই নতুন বিশ্বকে পরিচালনা করছে এমন প্রশ্নের জবাবে লু মালদ্বীপের উদাহরণ টানেন।
তিনি বলেন, ‘এটি এমন জায়গা যেখানে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ অন্যান্য দেশ নিজেদের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা করছে। আমরা আরও ভাল প্রস্তাব দেওয়ার মাধ্যমে জয়লাভ করব….আমার মত হলো চীন তখনই একটি ভাল অংশীদার হবে যখন সেখানে যথার্থ ও সত্যিকারের প্রতিযোগিতা থাকবে।’