লন্ডনে বসবাসরত ২০ বছর বয়সী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী শুচিস্মিতা মৈত্র অহনা ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্নের পর মাস্টার্স করার আগেই বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল সায়েন্সে ডি-ফিল (পিএইচডি) করার জন্য ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
অহনা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাডক্লিফ ডিপার্টমেন্ট অব মেডিসিন-এ গবেষণা করবেন। এই ল্যাবেই কোভিডের সময় অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা হয়েছিল। অহনা সেখানকার বিজ্ঞানীদের সঙ্গেও গবেষণায় অংশ নেবেন।
সাধারণত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি–ফিল (তাদের পিএইচডি ডিগ্রির নাম) করার জন্য শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স ডিগ্রির প্রয়োজন পড়ে। বিশেষ করে অনেককে বাধ্যতামূলকভাবে এমফিল বা এমএসসি গবেষণা করতে হয়। তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কিছু বিশ্বখ্যাত গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি মাস্টার্স না করে স্নাতক থেকে পিএইচডি (ডি–ফিল) এ ভর্তি হওয়ার নজির রয়েছে। তবে এটি খুবই বিরল এবং সাধারণত মেধাবী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে থাকে।
শুচিস্মিতা মৈত্র কিংস কলেজ লন্ডন থেকে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ফার্স্ট ক্লাসসহ স্নাতক (ব্যাচেলর) ডিগ্রি অর্জন করেছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডির প্রস্তাব (অফার) ছাড়াও তিনি ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনে মাস্টার্স প্রোগ্রাম এবং নরউইচ মেডিকেল স্কুলে এমবিবিএস কোর্স করার প্রস্তাবও পেয়েছেন। এ ছাড়া তিনি লন্ডনের কিংস কলেজে ডক্টরাল ট্রেনিংয়ের জন্য সম্পূর্ণ অর্থায়িত রিসার্চ ফেলোশিপে নির্বাচিত হয়েছেন। গ্রীষ্মকালীন ফেলোশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমেও তিনি আধুনিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। একই সঙ্গে অক্সফোর্ড, ইম্পেরিয়াল ও যুক্তরাজ্যের একটি মেডিকেল স্কুল থেকে ভর্তি প্রস্তাব পেয়ে ক্যারিয়ারের শুরুতেই চিকিৎসা গবেষণায় অবদান রাখতে শুরু করেছেন।

শুচিস্মিতা মৈত্র ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত খ্যাতনামা গ্রামার স্কুল সাউথ অ্যান্ড হাই স্কুল ফর গার্লসে পড়াশোনা করেছেন। সেখানে ধারাবাহিকভাবে অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি এসেক্সে জার্মান ভাষা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। এডুকেশন পারফেক্ট ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানে জাতীয়ভাবে শীর্ষস্থান লাভ করেছেন এবং মাঙ্গা হাই ম্যাথমেটিকস কম্পিটিশনে যুক্তরাজ্যে প্রথম হয়েছেন। তিনি ইউরোপীয় কমিশনের স্বীকৃতিও পেয়েছেন।

শুচিস্মিতার প্রতিভা কেবল স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত)-এ সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি শিল্পকলায়ও অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। ট্রিনিটি কলেজ লন্ডন থেকে ব্রোঞ্জ ও সিলভার আর্টস অ্যাওয়ার্ড সম্পন্ন করেছেন এবং জনসমক্ষে বক্তৃতায় উৎকর্ষ দেখিয়েছেন। এলএএমডিএ গ্রেড ৫ স্পিকিং ইন পাবলিক–এ তিনি সর্বোচ্চ সাফল্য পেয়েছেন। এ ছাড়া জ্যাক প্যাচি স্পিক আউট চ্যালেঞ্জের আঞ্চলিক ফাইনালিস্ট হিসেবে তাঁর ভাষাগত ও নেতৃত্বদানের দক্ষতা প্রমাণিত হয়েছে।
শুচিস্মিতা মৈত্রর বাবা পূর্ব লন্ডনের প্রবাসী সুকান্ত মৈত্র একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। মা কানিকা মূখার্জি বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষিক। বাবার বাড়ি বাংলাদেশের রাজবাড়ীতে, মায়ের বাড়ি বরিশালে। ২০০৫ সালে এক বছর বয়সে অহনা বাবা-মায়ের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান।
সাইদুল ইসলাম, লন্ডন থেকে