মাসুদা ভাট্টির বিরুদ্ধে বাংলাদেশবিরোধী মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগ

0
18
মাসুদা ভাট্টি

নানা কারণে বিতর্কিত মাসুদা ভাট্টির বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালানোর অভিযোগ তুলেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সম্প্রতি ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন বাতিল হচ্ছে’ শীর্ষক একটি ভিডিওতে মাসুদা ভাট্টি দাবি করেন যে, জাতিসংঘ তথাকথিত ‘জুলাই সন্ত্রাসবাদ’-এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরানোর ষড়যন্ত্রে জড়িত।

বিবৃতিটি বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস-এ প্রকাশ করা হয়।

ওই ভিডিওতে ভাট্টি আরও দাবি করেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরের পর ‘মানবিক করিডোর’-এর ছদ্মাবরণে রাখাইন রাজ্যে অস্ত্র পাঠানোর একটি প্রকল্প শুরু হয়।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ভাট্টি মিথ্যাভাবে জাতিসংঘের বাংলাদেশে আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসের বরাত দিয়ে দাবি করেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নিলেও যদি জনগণ অংশ নেয় তাহলে নির্বাচন বৈধ হবে।’

তিনি আরও দাবি করেন, বাংলাদেশের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ বাতিলের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

তার ভিডিওর এক পর্যায়ে তিনি একটি ছবি তুলে ধরেন, যেখানে দাবি করা হয় যে সেটি বাংলাদেশ দিয়ে জাতিসংঘের অস্ত্র পরিবহনের চিত্র। তবে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা গেছে, ছবিটির সাথে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি শাটারকক-এ আপলোড করা একটি ছবি, যার ক্যাপশন ছিল: ‘ফিলিস্তিনি ট্রাকে করে মানবিক সহায়তা কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে দক্ষিণ গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরে প্রবেশ করছে, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫।’

বিবিসিও এই ছবিটি ব্যবহার করে জানিয়েছিল, এটি গাজার মানবিক সহায়তা সংক্রান্ত।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভাট্টির জাতিসংঘ সমর্থিত রাখাইনের ‘করিডোর’ সংক্রান্ত দাবি ইতোমধ্যে খণ্ডন করা হয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ ধরনের গুজবকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ঢাকা সফরে এসে মানবিক সহায়তার একটি চ্যানেলের প্রস্তাব দেন ঠিকই, তবে সেটি কোনো পর্যায়ে বাস্তবায়নের পথে এগোয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে কোনো ষড়যন্ত্র করছে- এ ধরনের অভিযোগ শুধু ভিত্তিহীন নয়, বরং বাংলাদেশের লাখো মানুষের প্রতি অসম্মানজনক, যারা নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘জুলাই আন্দোলন কোনো বিদেশি শক্তি দ্বারা প্ররোচিত নয় বরং তা ছিল স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতার বিরুদ্ধে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত গণ-অভ্যুত্থান। এই আন্দোলনের পেছনে জাতিসংঘ বা যুক্তরাষ্ট্রসহ কোনো বিদেশি শক্তির সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ নেই।’

এ ছাড়া, গোয়েন লুইসের বক্তব্য বিকৃত করে উপস্থাপন করাও বিভ্রান্তিকর বলে বিবৃতিতে বলা হয়।

২০২৫ সালের ৪ জুন তারিখে গোয়েন লুইস স্পষ্টভাবে বলেন: ‘আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তবু যদি জনগণ যথাযথভাবে অংশ নিতে পারে, তাহলে সেটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে।’

তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের দৃষ্টিকোণ থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থ হচ্ছে- প্রত্যেক বাংলাদেশি নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।

প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাতিল হতে যাচ্ছে- এ ধরনের দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ বা অফিসিয়াল বিবৃতি নেই।

উল্লেখ্য, মাসুদা ভাট্টিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তথ্য কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরে গুরুতর অসদাচরণের প্রমাণ পাওয়ায় ২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারি তাকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়।

বিবৃতির শেষে বলা হয়, ‘এসব সত্ত্বেও মাসুদা ভাট্টি এবং তার মতো কিছু মতাদর্শিক প্রপাগান্ডাকারী ইউটিউবসহ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ভুল তথ্য ছড়ানো, ঘৃণা উসকে দেওয়া ও বিভ্রান্তি তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.