মার্কিন সাংবাদিক হেদারের বইয়ে নারীর নিতম্বের সাংস্কৃতিক ইতিহাস

0
166
হেদার রাদকের লেখা ‘বাটস: এ ব্যাকস্টোরি’ নামে বইয়ের প্রচ্ছদ, ছবি: সংগৃহীত

হেদার লিখেছেন, প্রায়ই মনে হতে পারে, নিতম্ব শুধু যৌনতা, লজ্জা, হাস্যরস প্রভৃতির প্রতীক। একজন নারীর নিতম্বের আকার-আকৃতি দীর্ঘকাল ধরে তাঁর নৈতিকতা, নারীত্ব, এমনকি মানবতাবোধ পরিমাপের সূচক হিসেবেও দেখা হয়।

নিতম্ব নিয়ে নিজের স্মৃতিকথার পাশাপাশি বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক সমালোচনা বইয়ে একত্রিত করেছেন হেদার। একই সঙ্গে নিতম্ব ঘিরে থাকা ফ্যাশন, ফিটনেস, পপ সংস্কৃতি বিশ্লেষণ করেছেন তিনি।

বইটি নিতম্বের শারীরবৃত্তীয় উত্স সামনে এনেছে। নিতম্ব নিয়ে ভিক্টোরিয়ান যুগ থেকে আধুনিক সময়ের চিন্তাধারা তুলে ধরেছে।

এক সাক্ষাৎকারে হেদার বলেন, একজন ভারী নিতম্বের শ্বেতাঙ্গ নারীর অভিজ্ঞতা কেমন হতে পারে, তাঁর সীমাবদ্ধতা কী হতে পারে, এসব তিনি জানেন। তাই আশপাশ থেকে আসা নানা ধরনের মন্তব্য শোনার পর নারীর বিভিন্ন অঙ্গ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করাটা তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

হেদারের মতে, ট্রান্স-আটলান্টিক দাস ব্যবসার উত্থানের পর থেকে নিতম্বসংক্রান্ত কথাবার্তায় সব সময় একধরনের জাতিগত অবমূল্যায়ন দেখা গেছে। একই সঙ্গে একটি লিঙ্গগত মনোভাবও লক্ষ করা গেছে। যেমন মেয়েলি শরীর কী, সুন্দর শরীর কেমন, একটি সুন্দর শরীর কীভাবে মেয়েলি হতে পারে—এমন সব প্রশ্ন আলোচিত হতে দেখা গেছে। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সময়ের ব্যবধানে কখনো এক ছিল না। কিন্তু নারীর শরীরের নির্দিষ্ট অংশ নিয়ে পুরুষের গভীর আগ্রহ সব সময়ই ছিল। এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নিতম্ব দীর্ঘকাল ধরেই নিয়ন্ত্রণ, কামনা ও জাতিগত শ্রেণিবিন্যাসের একটি উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

বইয়ে সারা বার্টম্যানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। ১৭৮৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি আদিবাসী পরিবারে তাঁর জন্ম হয়েছিল। একপর্যায়ে তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। ১৯ শতকে এই কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন, যুক্তরাজ্যের লন্ডন ও ফ্রান্সের প্যারিসে শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের সামনে তাঁর ‘বড় নিতম্ব’ প্রদর্শনে বাধ্য করা হয়েছিল।

সারা বার্টম্যানের শরীর কীভাবে অত্যধিক যৌনতার (হাইপার সেক্সুয়ালিটি) একটি ফ্যান্টাসিতে পরিণত হয়েছিল, তা নিয়ে লিখেছেন হেদার। তাঁর ভাষ্যমতে, নারীদের বড় নিতম্ব সুন্দর—এমন মনোভাব ইউরোপের ‘বর্ণবাদী বিজ্ঞানীদের’ মাথা থেকে এসেছে। পরবর্তী সময় আরেকটি ধারণা জনপ্রিয় হয়। তা হলো—নারীদের, বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের বড় আকারের নিতম্ব অধিক যৌন আবেদনের প্রতীক।

বিষয়টি নিয়ে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের নারী, লিঙ্গ ও যৌনতা অধ্যয়নের অধ্যাপক জ্যানেল হবসনের সঙ্গে কথা বলেছেন হেদার। সারা বার্টম্যানকে নিয়ে জ্যানেল অনেক লেখালিখি করেছেন। সারা বার্টম্যানের অঙ্গ নিয়ে অস্বাভাবিক যৌন আকর্ষণের সঙ্গে ঔপনিবেশিকতা ও শ্বেতাঙ্গ সমাজে থাকা দাসপ্রথার যোগসূত্র খুঁজে পান জ্যানেল।

সারা বার্টম্যান ১৮১৫ সালে মারা যান। মৃত্যুর পরও তাঁর রেহাই হয়নি। তাঁর শরীর প্রদর্শন করা হয়েছিল। হেদার বলেন, সারা নেই। কিন্তু তাঁর গল্প নানাভাবে সমাজে রয়ে গেছে। এই গল্প গৎবাঁধা ধারণা ও শোষণের প্রতীক।

উনিশ শতকের শেষভাগে ‘বাস্টেল’ নামে নারীদের একটি অন্তর্বাস জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই পোশাকে নারীর নিতম্ব বড় দেখায়। হেদারের মতে, ভিক্টোরিয়ান আমলের নারীরা নিজেদের সারার মতো দেখাতে আগ্রহী ছিল। তাই তারা এই পোশাক কিনত, পরত। কিন্তু এই প্রবণতা যুগে যুগে দেখা গেছে।

উদাহরণ হিসেবে, জনপ্রিয় মার্কিন তারকা কিম কারদাশিয়ান ও মাইলি সাইরাসের প্রসঙ্গ টেনেছেন হেদার। কৃত্রিম নিতম্ব ব্যবহার করে তাঁরা আলোচনায় এসেছিলেন।

বইটিতে উল্লেখ করা হয়, নিতম্বের কাঙ্ক্ষিত গড়ন পেতে অনেক নারী অস্ত্রোপচার পর্যন্ত করেন। অনেকে বিশেষ পোশাক পরেন। হেদারের মতে, শরীরের ইতিহাস, বিশেষ করে নারী শরীরের ইতিহাস সব সময়ই নিয়ন্ত্রণ ও নিপীড়নের ইতিহাস।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.