স্পষ্ট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্কের অভিঘাত। ক্রেতা প্রতিষ্ঠান থেকে আসতে শুরু করেছে দাম কমানোর প্রস্তাব। দেরিতে শিপমেন্ট করারও প্রস্তাব দিচ্ছেন কেউ কেউ। যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক যাদের রফতানি, মূলত তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে দুঃশ্চিন্তা। এই সংকট সামাল দিতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। কিন্তু সহসা সমাধানের পথ খোলা নেই।
ক্রেতাদের সঙ্গে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান উইকিটেক্স বিডি থেকেও জানা গেলো যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্কারোপে ক্রমান্বয়ে তৈরি হচ্ছে চাপ। প্রতিদিনই ক্রেতা প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া হচ্ছে শর্ত। কেউ বলছে কমিয়ে দিতে হবে পণ্যের দাম। কেউ আবার বাড়তি শুল্ক ভাগাভাগি করতে বলছেন।
উইকিটেক্স বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমান ফরহাদ বললেন, যেসব পণ্য শিপমেন্ট করেছে, গ্রাহক অনেকক্ষেত্রে বলছে যে ছাড় দিতে হবে। রানিং অর্ডারের ক্ষেত্রে এসে বলতেছে, যেই দরদাম করা হয়েছিল, তাতে নিতে পারছে না। কারণ হিসেবে ৫৭ শতাংশ শুল্ক দেয়ার কথা বলছে। এই সেটেলমেন্টটা তাদের সাথে না থাকায় দাম কমাতে বরছে। আবার আপকামিং যে প্রজেকশনগুলো আছে, সেগুলো সে রিলিজ করতেছে না। বলতেছে যে তোমাকে এখনই কিছু দিচ্ছি না। কারণ, আমরা নিশ্চিত নই যে ৫৭ শতাংশ শুল্ক দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবো কি না।
যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে চিঠি দিয়ে দামের বিষয়ে স্পষ্ট করতে তাগাদা দিয়েছে। একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চিঠিতে বলেছে, নতুন শুল্ক ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। দাম না কমালে বাংলাদেশে উৎপাদন চালু রাখা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ব্যাপকহারে বৃদ্ধিতে অনেক কোম্পানির জন্য বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পণ্য আমদানি করা খুব একটা আকর্ষনীয় হবে না। বরং চীন থেকে আরও কমে মিলবে পণ্য।
গার্মেন্টস বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এ কে এম সাইফুর রহমান ফরহাদ আরও বলেন, আমরা ইম্পোর্টেড ফেব্রিক ও এক্সেসরিজ দিয়ে শুধুমাত্র কাট, মেক অ্যান্ড ট্রিম (সিএমটি) যোগ করি। সিএমটি কত, ২৫ শতাংশ। তাহলে ২৫ শতাংশ সিএমটির যে শিল্প সেখানে গ্রাহক যদি দাম কমানোর চাপ দেয়, কতটুকু কমানো যায়? কারণ ৭৫ শতাংশের যেই জায়গাটা এটা তো আমাদের প্লে-জোন না। এই সুযোগটা আছে ভারত, চীন, ভিয়েতনামের।
ডোনাল্ড ট্র্যাম্পের বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে তৈরি পোশাক খাত। তিন মাসের সময় চেয়ে মার্কিন সরকারের কাছে গেলো সোমবার চিঠি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে সিদ্ধান্তের বিষয়ে এখনও কিছু জানায়নি মার্কিন প্রশাসন।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বললেন, উৎপাদকদের যে শুল্ক ভাগ করার কথা বলছে এইটা আসলে কঠিন হবে। কারণ, আমরা বাংলাদেশে অনেক কম দামে কাজ করি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে সবমিলিয়ে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। তার মধ্যে ৭ বিলিয়নই যায় তৈরি পোশাক। বলা হচ্ছে, সরকারের সার্বক্ষণিক তদারকিতেই সংকট থেকে উত্তরণ হওয়া সম্ভব।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, ৯ তারিখের আগে যেগুলো শিপমেন্ট হয়েছে সেগুলো আগের নিয়মে শুল্কে, আর ৯ তারিখ থেকে যেটা হবে সেটা নতুন শুল্কে গিয়ে পড়বে। এই বিষয়েও আসলে আমরা পুরোপুরি পেপার পাইনি। বায়াররা এটা নিয়ে কথা বলছে, তারা উদ্বিগ্ন। কিন্তু আমরা আবার এটাও চিন্তা করছি যে একটা সমাধান আসবে। কারণ, আমাদের সরকার এটা নিয়ে কথা বলছে।
শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করে বাংলাদেশে মার্কিন পণ্যের অবাধ বাজার তৈরির সরকারের যে উদ্যোগ এতেই দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে ধারণা অনেকের।